মানুষের যুক্তিবোধ থেকেই নৈতিকতার উৎপত্তি

মানুষই সর্বপ্রথম নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য এবং সুখে শান্তিতে থাকার জন্য নৈতিকতার সৃষ্টি করেছিলো, ধর্ম নয়। 

ধরুন, পৃথিবীতে কোন ধর্ম নেই বা ধর্মের ছোঁয়া লাগে নি। আদিম কিছু মানুষ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে হটাৎ একত্রিত হয়ে সমাজবদ্ধ হয়ে বসবাস শুরু করলো। নৈতিকতার সৃষ্টিও এখনও হয় নি। 

কিভাবে ধর্ম ছাড়াই নৈতিকতার সৃষ্টি হয় আমরা একটু দেখি। 

এসব মানুষের মধ্যে একজনের নাম  X, অন্যজনের নাম Y। একদিন X Y এর কোন কিছু  চুরি করলো, কিছু ক্ষতিও করলো, কিন্তু X তখনও বুঝতে পারেনি এসব অন্যায়। 

অন্যএকদিন, Yও একই কাজগুলো X এর সাথে করলো এবং তখন X চিন্তা করলো যে আমার কিছু চুরি বা হরণ করলে আমার যেমন খারাপ লাগে, অন্যের সাথেও  করলেও তার খারাপ লাগে। সুতরাং এসব করা যাবে না। এগুলো খারাপ বা অন্যায় কাজ। এভাবে একে অপরের অধিকার হরণ বা ক্ষতি করা শুরু করলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে, মারামারি কাটাকাটি হবে। ফলে আমরা সুখে শান্তিতে থাকতে পারবো না। 

তারপর তারা একটি নীতিবাক্য সৃষ্টি করলো, 

“নিজের প্রতি যে কাজটি অন্যজনে করুক এমনটি চান না, অন্যের প্রতিও সেটি করবেন না। ” এই উক্তিটি থেকে তারা ৯০% নৈতিকতার সংজ্ঞা পেয়ে গেল। 

আবার, একদিন Y নামক ব্যক্তি বিপদে পড়ে X নামক ব্যাক্তির কাছে সাহায্য চাইলো, কিন্তু X সাহায্য করলো না। ঠিক, অন্য একদিন  Yও X এর সাথে একই কাজ করলো। 

তারপর, X বুঝতে পারলো যে ভালো থাকতে হলে একে অপরকে সাহায্য করতে হবে। 

এগুলো প্রথম ধাপের নৈতিকতা। এরপর মানুষ ধীরে ধীরে তাদের যৌক্তিক এবং উন্নত চিন্তা, মায়া- দয়া, সামাজিক প্রেক্ষাপট এসবের উপর ভিত্তি করে থেকে নতুন নতুন নৈতিকতা তৈরি করলো যেখানে ধর্মের কোন প্রয়োজনই পড়েনি এবং পড়ছে না। ধর্ম ছাড়াই মানুষের মাঝে যৌক্তিক কারণে নৈতিকতা ছিলো এবং এখমও ধর্মহীন সমাজের মানুষ ধর্মপ্রাণ সমাজের চেয়ে বেশি  নৈতিক। ধর্মপ্রাণ দেশগুলোতে অপরাধ বেশি। 

মানুষ মূলত নিজেদের অধিকার নিরাপত্তা এবং সুখ শান্তির জনই এসব তৈরি করেছিলো এবং এখনও করছে। ধর্মের সাহায্য ছাড়াই মানুষ নতুন নতুন আইন তৈরি করছে। সভ্যতা ও সামাজিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের সাথে সাথে মানুষের কিছু নৈতিকতার পরিবর্তনও হতো। কিছু কাজ ছিলো সবসময়ের জন্য অন্যায়, আর কিছু ছিলো নির্দিষ্ট কিছু সময়ের জন্য।

কিন্তু ধর্মগুলো যে কাজটা করলো তা হলো মানুষের বানানো কিছু নৈতিকতাকে এবং নিজের ধর্ম বা মতবাদের স্বার্থে বানানো অনেকগুলো অযৌক্তিক, অমানবিক এবং অন্যায় নিয়মকে ইশ্বর হুকুম বলে চালিয়ে দিলো। শুধু তাই নয়, ধর্ম নিজ ধর্মের লোকের অপরাধের জাস্টিফিকেশন দিয়েছে এবং অপরাধ মোচন ও তা থেকে পার পাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। তার অগণিত উদাহরণ আমরা দেখতে পাই। 

সুতরাং, মানুষই নিজেদের প্রয়োজনে নৈতিকতা তৈরি করেছিলো যুক্তিবোধ এবং মানবিক আবেগে থেকে। ধর্ম ছাড়াই মানুষের পক্ষে নৈতিকতা তৈরি করা  সম্ভব, যেভাবে মানুষের পক্ষে ধর্ম ছাড়াই প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র, পোশাক, বাড়িঘর  দা – কুড়াল ও অন্যান্য  যন্ত্রপাতি  তৈরি করা সম্ভব হয়েছিল এবং হচ্ছে।

Forhad H Fahad

Related Posts

পরকাল নিয়ে মুমিনদের বহুল জিজ্ঞেসিত প্রশ্নের জবাব

প্রশ্ন : পরকাল না থাকলে যেসব অপরাধীদের দুনিয়াতে উপযুক্ত শাস্তি দেয়া সম্ভব হচ্ছে না তাদের বিচার কিভাবে হবে? জবাব : ১. আপাততদৃষ্টিতে যদিও আমরা ধরে নিই যে পরকাল থাকলে আসলেই অপরাধীদের উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত হতো এবং খুব ভালো হতো, তার মানে কি এই যে পরকাল আছে বা পরকাল সত্য? অর্থাৎ কোনকিছু হলে বা থাকলে ভালো হতো, তার মানে তো এই নয় যে সেটা সত্য বা আছে। উদাহরণসরূপ : আপনি…

Read more

ধর্ম না থাকলে মানুষ নৈতিকতা শেখবে কোথা থেকে? 

ধরুন, একজন আধুনিক সভ্য মানুষ হিসেবে আপনার কাছে অবশ্যই যুদ্ধবন্দী নারীকে গনিমতের মাল হিসেবে বিছানায় নেয়া খুবই নিন্দনীয় কাজ বলে গণ্য হবে। কিন্তু এই কাজটি আপনার নবীজী নিজ জীবনে কয়েকবারই করেছেন, এবং অন্যদেরও করতে বলেছেন। বা ধরুন আপনি এমন কারও সাথে আপনার বোন বা কন্যাকে বিয়ে দেবেন না, যার ইতিমধ্যে তিনজন স্ত্রী আছে। আপনার বিবেক, বুদ্ধি, আধুনিক মূল্যবোধ, আধুনিক ধ্যান ধারণা আপনাকে সেইসব মধ্যযুগীয় কাজ করতে বাধা দেবে। যদিও…

Read more

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Latest

আমাদের জাতীয় সঙ্গীত কি হিন্দু শাক্তদেবী মা-কালীকে উদ্দেশ্য করে লেখা?

আমাদের জাতীয় সঙ্গীত কি হিন্দু শাক্তদেবী মা-কালীকে উদ্দেশ্য করে লেখা?

একেই কি বলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা?

একেই কি বলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা?

কর্ণচিকিৎসা

কর্ণচিকিৎসা

তাকদীর বিষয়ক রেফারেন্স

তাকদীর বিষয়ক রেফারেন্স
কুদরত

পরকাল নিয়ে মুমিনদের বহুল জিজ্ঞেসিত প্রশ্নের জবাব

পরকাল নিয়ে মুমিনদের বহুল জিজ্ঞেসিত প্রশ্নের জবাব