চিন্তা-১
প্রকৃতি বলতে আমরা কেন কেবল নদী-খাল-বিল, সমুদ্র, পাহাড়, মেঘ, পর্বত, ঝর্ণা, অরণ্য, ফুল, পাখি, প্রজাপতি, গাছপালা ইত্যাদিকে বুঝে থাকি? রাস্তায় জ্যামের ভেতর বসে সামনেপেছনে যে যানবাহনের সারি দেখি, দুধারে যে ইটপাথরের দৈত্যাকার স্তুপের মতো উচু উচু ভবনাদি দেখি এগুলোও তো প্রকৃতি। এমন কোন জিনিশ আছে যা প্রকৃতি নয়? মানুষ কোনো বস্তুর স্বাভাবিক রূপ পরিবর্তন করে নিজের ইচ্ছামতো অবয়ব ও তাৎপর্য দান করলে তা আর প্রকৃতি থাকে না? হয়ে যায় কৃত্রিম? আসলে এই জগতে কৃত্রিম বলতে কিছুই নেই। এমন কিছু নেই যা প্রকৃতি নয়।
মানুষ নিজেও স্বয়ং প্রকৃতি। মানুষ যখন কোনো মানুষকে দ্যাখে তখনো সে প্রকৃতিকেই দ্যাখে। প্রকৃতি স্বয়ং প্রকৃতিকে দ্যাখে। বহু ভাগে বিভক্ত হয়ে নিজেকে দ্যাখে। নানা দৃষ্টিকোণ থেকে নিজেকে দ্যাখে। মানুষ প্রকৃতির একটি চেতন অংশ মাত্র। যা আবার সমগ্র প্রকৃতির সাথে অবিচ্ছিন্ন-অবিচ্ছেদ্যভাবে সম্পর্কিত। হাওয়ার সমুদ্রে সে ডুবে থেকে প্রতিনিয়ত শ্বাসপ্রশ্বাস নিচ্ছে। খাদ্য খেয়ে, জল পান করে সে প্রতিনিয়ত পারিপার্শ্বিক প্রকৃতির সাথে অঙ্গ বিনিময় করছে। প্রতি চার মাসে রক্ত পরিবর্তন করছে। প্রকৃতির কাছ থেকে নতুন রক্ত চেয়ে নিচ্ছে। নতুন দেহটিস্যু চেয়ে নিচ্ছে শরীরের প্রতিটি প্রান্তে।
এই মহাবিশ্ব আসলে একটি অখণ্ড, অবিচ্ছিন্ন একক প্রকৃতি। অনন্ত শূন্যতা হলো প্রকৃতির সবচেয়ে বড় অস্তিত্ব। দর্শকের অবস্থানগত দৃষ্টিভ্রমের জন্য শূন্যতা কখনো আকাশ, কখনো পাতাল, কখনো খোলা মাঠ, কখনো পদার্থের ধারক হিসেবে দৃষ্টিগোচর হয়। কোনো পদার্থেরই স্থানহীন অবস্থান অসম্ভব। শূন্যতার অপর নামই স্থান। অখণ্ড স্থানকে তার অবস্থা অনুযায়ী দুটি প্রকারভেদে অনুভব করা যায়—শূন্যস্থান, পূর্ণস্থান।
পদার্থহীন বা বস্তুহীন স্থানকে শূন্যস্থান বলা যায়। পূর্ণস্থান বস্তুময়। পূর্ণস্থান সৃষ্টি হয় যখন শূন্যস্থানে কোনো বস্তু অবস্থান করে। জগতের প্রতিটি বস্তু যেহেতু চলক, ভ্রমণশীল, ছুটন্ত তাই পূর্ণস্থান প্রতিনিয়ত আবার শূন্যস্থানে পরিণত হয়, অবস্থিত অস্তিত্বটি তার ভেতর থেকে সরে গেলেই।
চিন্তা-২
সময় বলতে আলাদা কিছুর অস্তিত্ব নেই। সময় হলো জগতের সকল পদার্থের বিন্যাস পরিবর্তনের গতি। সময় উৎপন্ন হয় পদার্থের গতিশীলতার ফলে। জগতের সচলতার ফলে। মহাবিশ্ব গতিশীল না হলে সময়ের অস্তিত্ব সম্ভব হত না। বস্তুর সক্রিয়তাই সময়কে তৈরি করে চলেছে। সময়কে পেছনে নিয়ে যাওয়া সম্ভব যদি ক্রিকেট খেলার রিপ্লের মতো সকল পদার্থের গতিকে উল্টো ঘোরানো যায়। আর সকল পদার্থের গতিকে স্থির করা গেলে সময়ও স্থির, অনড় হয়ে যেতে বাধ্য।
সকল পদার্থের সম্মুখ অভিমুখী যাত্রাকে উল্টো ঘোরানো গেলে অর্থাৎ যে পথে সে এসেছিল ঠিক সেই পথে পশ্চাৎগমন করলে যে কোনো অতীত যুগকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব।
সময়ের ভৌত অস্তিত্ব নেই। অর্থাৎ এটি কণা দ্বারা গঠিত নয়। এটি একটি অনুভূতি মাত্র। অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ এর অনুভূতি। অতীত হলো পদার্থের পূর্বের অবস্থান, যাবতীয় কণাসমূহের সমসাময়িক অবস্থান হলো বর্তমানকাল। আর যাবতীয় কণাসমূহের পরবর্তী অবস্থান হলো ভবিষ্যৎ কাল। জগতের পদার্থসমূহ সচলতার মাধ্যমে নিজের বিন্যাস পরিবর্তন করে মহাশূন্যের মধ্যে বিভিন্ন রূপ ধারণ করে অনন্ত ক্রীড়ায় লিপ্ত।
আবদুল্লাহ আল তারেক
১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮