প্রশ্নঃ – ‘আচ্ছা, আপনার বাবা-মা’র মিলনেই যে আপনার জন্ম হয়েছে, সেটা আপনি দেখেছিলেন? বা, এই মূহুর্তে কোন এভিডেন্স আছে? হতে পারে আপনার মা আপনার বাবা ছাড়া অন্য কারো সাথে দৈহিক সম্পর্ক করেছে আপনার জন্মের আগে। হতে পারে, আপনি ঐ ব্যক্তিরই জৈব ক্রিয়ার ফল। আপনি এটা দেখেন নি।
কিন্তু কোনদিনও কি আপনার মা’কে এটা নিয়ে প্রশ্ন করেছিলেন? করেন নাই। সেই ছোটবেলা থেকে যাকে বাবা হিসেবে দেখে এসেছেন, এখনো তাকে বাবা ডাকছেন। যাকে ভাই হিসেবে জেনে এসেছেন, তাকে ভাই। বোনকে বোন।
আপনি না দেখেই এসবে বিশ্বাস করেন না? কোনদিন জানতে চেয়েছেন আপনি এখন যাকে বাবা ডাকছেন, আপনি আসলেই তার ঔরসজাত কিনা? জানতে চান নি। বিশ্বাস করে গেছেন। এখনো করছেন। ভবিষ্যতেও করবেন। স্রষ্টার অস্তিত্বে বিশ্বাসটাও ঠিক এমনই। এটাকে প্রশ্ন করা যায়না। সন্দেহ করা যায়না। এটাকে হৃদয়ের গভীরে ধারন করতে হয়। এটার নামই বিশ্বাস।’
উত্তরঃ আপনার অসাধারণ এবং অতি জটিল প্রশ্নটির জন্য অনেক ধন্যাবাদ।
ধরুন, কাল রহিমুদ্দীন বা কলিমুদ্দীন নামের একজন রাস্তায় আপনাকে এসে জাপটে ধরে বললো, সেই আপনার বাবা। এবং আপনাকে বলা হলো, সেটা হৃদয় দিয়ে ধারণ করতে। বিশ্বাস করতে। কোন যুক্তি বা প্রমাণ না চাইতে। এই নিয়ে সন্দেহ না করতে। প্রশ্ন না করতে। আপনি কী করবেন? যেহেতু আপনাকে খুব বিশ্বাসী লোক বলে মনে হচ্ছে, যিনি যুক্তির ধার ধারেন না, বা সন্দেহ অথবা প্রশ্ন করেন না (এরকম লোককে আমরা আড়ালে আহাম্মক বলে ডাকি), তাই ধরে নিচ্ছি আপনি বাবা বাবা বলে তার গালে দুটো চুমু দেবেন। নাকি?
কী বলছেন? মানবেন না? প্রমাণ চাইবেন? কী অদ্ভুত! হৃদয় দিয়ে তাকে কেন বাবা বলে ধারণ করতে পারছেন না? একটু আগেই না বললেন, আপনি হৃদয় দিয়ে এইসব ধারণ করতে ভালবাসেন? সন্দেহ বা প্রশ্ন করেন না? যুক্তির ফ্যালাসিটুকু ধরতে পারছেন?
আপনি নিজেও অন্ধভাবে কাউকে আপনার পিতা বা জনক হিসেবে বিশ্বাস করেন না। সেখানেও আপনি যুক্তি এবং প্রমাণ চান। আপনি ছোটবেলা থেকে পরিবারে যাদের দেখে এসেছেন, সেই অভিজ্ঞতা থেকেই আপনি তাদেরকে বাবা মা হিসেবে জেনেছেন। আপনার ক্ষেত্রে আপনার এই পূর্ব অভিজ্ঞতাই আপনার যুক্তি। সেই যুক্তি প্রমাণের ওপর নয়, অভিজ্ঞতার ওপর নির্ভরশীল।
কাল যদি আরো প্রমাণ পান যে, আসলে আপনার জনক অন্য কেউ, সেই প্রমাণ যদি একদম বস্তুনিষ্ঠ হয়, তাহলে সেই নতুন ব্যক্তিই আপনার জনক, তাতে কোন সন্দেহ থাকার কথা নয়। ডিএনএ টেস্ট এক্ষেত্রে গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। একজন বিজ্ঞানমনষ্ক সত্যনিষ্ঠ মানুষ হিসেবে আমি মেনে নিবো সেসব প্রমাণ।
তাহলে দেখা যাচ্ছে, আপনিও আসলে যুক্তি নির্ভরই। অন্ধভাবে কোন কিছু মেনে নিতে আপনিও ইচ্ছুক হবেন না। তাহলে কাল রহিম করিম যে কেউ এসে আপনার জনক বলে দাবী করতে পারে। যেহেতু আপনি এতটা নির্বোধ নন, তাই সে ক্ষেত্রে যুক্তি এবং প্রমাণ দাবী করাই আপনার জন্য উত্তম। আর বিশ্বাসী হয়ে থাকলে গোটা দশেক রহিম করিম নামধারী বাবা নিয়েও সন্তুষ্ট থাকতে পারেন। কেউ কিছু বলবে না। চিয়ার্স!
বাবা শব্দটা থেকে আরো স্পেসিফিক শব্দ হচ্ছে, পিতা এবং জনক। পিতা শব্দের অর্থ যে পালন করে। জনক মানে যে জন্ম দেয়। আমি মোটেও বিশ্বাস করি না যে, আমার পিতাই আমার পিতা। আমি সেটা জানি,প্রমাণ সহকারে। কারণ আমি ছোটবেলা থেকে নিজ চোখে দেখে এসেছি, তাকে আমাদের লালন পালন করতে। চাকরি করে আমাদের খাওয়াতে। তাই সে আমাদের পিতা। মানে পালনকারী।
তিনি আমার জনক কিনা, সেটা দিয়ে আসলে আমার কিছু যায় আসে না। কোথাকার কেউ যদি আমার মায়ের সাথে কোন সম্পর্ক করেও থাকে, সেটা সেখানেই শেষ হয়ে গেছে। সে আমার আপন কেউ নয়। আমার মায়ের পরিচয়েই আমি পরিচিত হতে পারি। আমার পালনকারী পিতার পরিচয়েও। তাই আমার জনক নিয়ে আমি বিন্দুমাত্র চিন্তিত নই। আমার জন্ম যেহেতু হয়েছে, সেটাই গুরুত্বপুর্ণ। কে জন্ম দিয়েছে, সে যদি আমাদের দায়িত্ব না নিয়ে থাকে, সে আমার একজন অপরিচিত মানুষ। তাকে আমি গোণায় ধরি না। কাল যদি একদম বস্তুনিষ্ঠ প্রমাণ পাই, অন্য কেউ আমার জনক, আমি মেনে নিবো। কিন্তু তা নিয়ে খুব মাথা ঘামাবো না।
তেমনি ঈশ্বরের ব্যাপারটিও। কোথাকার কোন আল্লাহ ভগবান ঈশ্বর এসে আপনার কাছে স্রষ্টা হওয়ার দাবী জানাচ্ছে। ভয় দেখিয়ে উপাসনা চাচ্ছে। আমরা বলছি, বেশ তো? প্রমাণ করুন, মেনে নিবো। কিন্তু এখন পর্যন্ত কেউ প্রমাণ করতে পারে নি। প্রমাণ করতে পারলে, মেনে নিতে আপত্তি তো নেই।
– সংশয়