” এই প্রকৃতিকে কে সৃষ্টি করেছে? “
– এই প্রশ্নটি আমাদের লাইনের কমবেশি সবাই শুনেছে। ধার্মিকরা এই প্রশ্ন কমনলি করতে চায়। এই প্রশ্ন যে ইনভ্যালিড, তা যে তারা জানে না এমন নয়, তারা এটি ইচ্ছা করেই করে স্বল্প বোঝা লোকদের বিভ্রান্ত করার জন্য।
★ আসুন আগে দেখি এই প্রশ্নের যৌক্তিকতা।
এই ধরনের প্রশ্নকে বলা হয় Loaded Question. আগে একটা বিষয়কে স্বীকার করে নিয়ে এই প্রশ্নটা করা হয়।
উদাহরণস্বরূপ : প্রশ্নঃ আপনি কি আপনার বউ পেটানো বন্ধ করেছেন?
সম্ভাব্য উত্তরঃ হ্যাঁ অথবা, না।
আপনি যদি বলেন হ্যাঁ, তাহলে এর মানে আগে বউ পেটাতেন এখন বন্ধ করেছেন।
যদি বলেন না, তাহলে আগেও+এখনো পেটান। কিন্তু বাস্তবিক ক্ষেত্রে আপনি কখনোই বউ পেটান নি। এই প্রশ্নে আগেই ধরে নেওয়া হয়েছে “আপনি আগে বউ পেটাতেন”।
আমাদের আলোচ্য প্রশ্নেও ধরে নেওয়া হয়েছে ” প্রকৃতিকে কেউ না কেউ তো সৃষ্টি করেছে” – কিন্তু এই দাবি কতটুকু সত্য?
যারা এই ধরনের প্রশ্ন করে তাদের থেকে এই স্বীকার্যের সত্যতা জানতে চাই। তারা সত্য প্রমাণ করুক। তারপরেই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া যাবে।
যদি প্রকৃতিকে কেউ সৃষ্টি করে থাকে, তাহলে এই প্রশ্নও আসবে তাকে কে সৃষ্টি করেছে? আবার তাকে কে সৃষ্টি করেছে?
এরকমভাবে এই প্রশ্ন অতীতে ইনফাইনিটিতে চলতে থাকবে।
তাহলে আপনার অস্তিত্ব কীভাবে আসলো? আপনি কী করে আমার ব্লগ পড়ছেন? আপনি তো তাহলে ইনফাইনিটিতে অবস্থান করছেন! আপনার প্রত্যক্ষ সৃষ্টিকর্তা পরোক্ষভাবে ইনিফাইনিটি লেভেলের সৃষ্টিকর্তার থেকে অনুমতিপ্রাপ্ত হয়ে আপনাকে অস্তিত্বে এনেছে!!
আদৌ কি এটি সম্ভব?
আপনার অস্তিত্বই ‘ প্রকৃতিকে কেউ সৃষ্টি করেছে’ এই ধারণাকে অস্বীকার করে।
★ মনে করি, প্রকৃতিকে “X” নামক একজন সত্তা সৃষ্টি করেছেন। (এবার ইনিফাইনিটির দিকে না গিয়ে চেষ্টা করবো)।
প্রকৃতি এবং X এর শক্তির তুলনা করা যাক।
সম্ভাব্য তুলনা সমূহঃ
১. প্রকৃতির থেকে X বেশি শক্তিশালী।
২. X এর থেকে প্রকৃতির শক্তি বেশি।
এগুলো বিবেচনা করে দেখা যাক।
প্রথম ধারণাটি সঠিক না।
কারণ, আমরা প্রতিনিয়ত দেখতে পাচ্ছি প্রকৃতির শক্তি, অথচ আল্লাহর কোন ক্ষমতা নেই, সে তার ঘরও রক্ষা করতে পারে না।
২য় ধারণাটি সঠিক, কিন্তু এই ধারণার উপর ভিত্তি করে প্রকৃতির স্রষ্টা X হতে পারে না।
কারণ এখানে X প্রকৃতির মধ্যে থাকা অতিরিক্ত ধরণের শক্তিটা পেলো কোথা থেকে দেওয়ার জন্য? যদি কোনোভাবে (অসম্ভব) দিয়েও দেয়, এর মাধ্যমে তো X তার স্রষ্টাত্ব হারালো! X কি তাহলে বুদ্ধিহীন?
অতএব বলা যায়, X অবাস্তব। X থাকতে পারে না। প্রকৃতির কোনো সৃষ্টিকর্তা থাকতে পারে না।
★ যখন অবিশ্বাসীরা বলে প্রকৃতির কোন সৃষ্টি বা ধ্বংস নেই, আছে শুধু রূপান্তর। পদার্থের অবস্থার পরিবর্তন হয় কিন্তু ধ্বংস বা বিলুপ্ত নয়। তখনই বিশ্বাসীরা মানে না, অথচ তারাই আবার বলে অস্তিত্বহীন আল্লাহর নাকি সৃষ্টি বা ধ্বংস নেই।
★ উত্তম প্রশ্ন জ্ঞানের অর্ধেক।
পুনশ্চঃ অস্তিত্বহীন এবং প্রমাণহীন আল্লাহর ক্ষেত্রে যে যুক্তিগুলো খাটান সেগুলো অস্তিত্বময় এবং প্রমাণিত প্রকৃতির পেছনে খাটান। তাহলেই সমস্যা সুন্দর, যৌক্তিক এবং বাস্তবিক সমাধান হবে।
অস্তিত্বময় প্রকৃতিকে মেনে না নিয়ে অস্তিত্বহীন, ক্ষমতাহীন, প্রমাণহীন ওসব X বা Xদের কল্পনায় না আনলেই হয়।