কানে প্রচণ্ড ব্যথা নিয়ে পরহেজগার বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক আবুল কাশেম এলেন পূর্বপরিচিত এক নাককানগলা বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে। প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ডাক্তার প্রেসক্রিপশনে রোগের নাম লিখলেন ওটালজিয়া এবং দিলেন কিছু এন্টিবায়োটিক ওষুধ। রোগীকে ব্যবস্থাপত্র হাতে তুলে দিয়ে চিকিৎসক বললেন : যে ওষুধগুলো দিলাম, এগুলো খান, আশা করি ঠিক হয়ে যাবে।
দ্বীনদার রোগী ডাক্তারকে থামালেন।
—একটু ভুল হয়ে গেল ডাক্তার সাহেব। ‘ঠিক হয়ে যাবে’ বলার আগে বলা উচিত ছিল ‘ইনশাআল্লাহ’। ওষুধের রোগ ভালো করার কোনো ক্ষমতা নেই, যদি মহান আল্লাহর হুকুম না থাকে। রোগ ভালো হবে আল্লাহর হুকুমে, ওষুধ তো উছিলা মাত্র।
ডাক্তার প্রফেসর আবুলের দিকে তাকিয়ে হ্যাঁ-সূচক মিষ্টি হাসি হাসলেন। হাসি দেখে আবুল খানিকটা উৎসাহ পেয়ে দু-এক লাইন দ্বীনের দাওয়াত দিতে লাগলেন।
তারপর জিজ্ঞেস করলেন, আচ্ছা আমার এই কানে ব্যথা রোগটা কেন হলো ডাক্তার সাহেব? চিকিৎসক সংক্ষেপে বললেন—সংক্রমণ। সম্ভবত আপনার কানে পানি জাতীয় কিছু প্রবেশ করেছিল। কানের ভেতরে ইউস্টাচিয়ান টিউবে তরল জমা হওয়ার জন্য সংক্রমণটি হয়ে থাকতে পারে। যদি ইউস্টাচিয়ান টিউব দীর্ঘ সময়ের জন্য অবরুদ্ধ হয়ে যায়, তাহলে ভেতর থেকেও তরল জমা হতে পারে, যার ফলে কানে সংক্রমণ হয়।
প্রফেসর আবুল এবার চিন্তায় পড়ে গেলেন। কিছুক্ষণ চুপ থেকে হঠাৎ নীরবতা ভাঙলেন “সুবহানাল্লাহ” বলে। ডাক্তার হতচকিত হয়ে আবুলের দিকে তাকালেন।
পানির প্লবতার নীতি আবিষ্কার করে বিজ্ঞানী আর্কিমিডিস যেমন ইউরেকা ইউরেকা বলে চিৎকার করেছিল পাক্কা মুমিন প্রফেসর আবুলের ‘সুবহানাল্লাহ’ বলার মধ্যেও ছিল তেমনই আবিষ্কারের মোহিত উচ্ছ্বাস।
ডাক্তারের প্রশ্নবোধক তাকিয়ে থাকাকে নিবৃত্ত করতে প্রফেসর আবুল এবার বলে উঠলেন :
বিজ্ঞান এই তো সেদিন জানতে পেরেছে মানব শরীরের জটিল সব রহস্য। কিন্তু আল্লাহর রাসুল আজ থেকে ১৪ শো বছর আগে অনেক রহস্য উন্মোচন করে গেছেন তাঁর মূল্যবান অনেক হাদিসে।
ডাক্তার মুমিন প্রফেসরের বাকভঙ্গি কিছু বুঝে উঠতে না পেরে জিজ্ঞেস করলেন—নিজের রোগের কারণ সম্পর্কে আপনি কি কিছু ধরতে পারলেন হাদিসের আলোকে?
ডাক্তারের কথা শুনে প্রফেসরের মুখে তৃপ্তির হাসি৷ মাশ আল্লাহ! ঠিক ধরেছেন ডাক্তার। আমার কানে সংক্রমণের রহস্য আমি খুঁজে পেয়েছি। কিছুদিন আগে ফজরের নামাজ পড়তে উঠতে পারি নি প্রচণ্ড অলসতার কারণে। ধারণা করছি, ঠিক ঐ সময়ে শয়তান আমার কানে পেশাব করে দিয়েছে। আর এই কারণেই ইনফেকশন!
পাক্কা মুমিন প্রফেসরের কথা শুনে ডাক্তারের মনের হিরোশিমায় হাসির বোমা বিস্ফোরণের অবস্থা। কোনো মতে নিজেকে সামলিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “আপনি কি সিরিয়াসলি বলছেন প্রফেসর সাহেব?”
আবুল এবার ডাক্তারের অজ্ঞতা ধরিয়ে দেয়ার জন্য মোবাইল ফোনটি হাতে নিয়ে গুগলসার্চে গিয়ে ঝটপট টাইপ করলেন বুখারি শরীফের ১১৪৪ নম্বর হাদিসটি। সার্চ রেজাল্টটি ডাক্তারের হাতে ধরিয়ে দিয়ে নিজে চুপ করে রইলেন পড়ার অবসরটুকু দেয়ার জন্য।
হাদিস পড়ে ডাক্তারের চোখ ছানাবড়া। চিকিৎসকের চোখে বিস্ময় দেখে আবুল মনে মনে খুশি। আবুল ভাবছে, মাত্র একদিন ফজরসালাত মিস করায় শয়তান অমন কামডা করতে পারে—এর পূর্বাভাস ১৪ শো বছর পূর্বে মরুময় প্রান্তরে বসে এক মেষপালক বিজ্ঞানী আগেই দিয়েছিলেন; আজ নিজের কানের ইনফেকশন না হলে হয়ত এই হাদিসের গুরুত্ব সে কোনোদিন বুঝতে পারত না! আল্লাহ বান্দাকে কষ্টে ফেলে মাঝেমাঝে ইলম শিক্ষা দেয়। সুবহানাল্লাহ!
কিন্তু ডাক্তার মরু-বিজ্ঞানীর হাদিসটি পড়ে হা-করে আছে এখনো বিস্ময়ে। তার বিস্ময়ের সঠিক কারণ পাক্কা মুমিন প্রফেসর সাহেব আদৌ ধরতে পারেন নি।
অণুগল্প : কর্ণচিকিৎসা
আবদুল্লাহ আল তারেক
২৪ এপ্রিল ২০২৪