সম্প্রতি ব্রুনাইতে ইসলাম ধর্ম ও নবীকে নিয়ে সমালোচনা বা কটুক্তিকারীদের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের শাস্তির বিধান করা হয়েছে।
এমনকি সকল মুসলিমপ্রধান দেশগুলোতেও ইসলাম ধর্ম ও নবীকে নিয়ে সমালোচনা করলে মৃত্যুদণ্ড, হত্যা, কারাবন্দী, দীর্ঘমেয়াদী শাস্তিসহ বিভিন্ন সমস্যার শিকার হতে হয়, যা সুস্পষ্ট মানবাধিকার লঙ্ঘন।
প্রতিটি সমালোচনাই কারো না কারো অনুভূতিতে আঘাত করে। এভাবে সবাই যদি ইসলামের মতো অভিযোগ করে স্বৈরাচারী আইন করে তবে কোন মানুষই সমালোচনা করতে পারবে না, এমনকি মুসলিমরাও না। ফলে মানুষের চিন্তা ও বুদ্ধিবৃত্তির বিকাশ চরম হুমকিতে পড়বে।
এখন কথা হলো যে ব্যক্তি কটু কাজ করেছে বা কটু কাজ করার তথ্যপ্রমাণ অভিযোগ রয়েছে। যাকে অনুসরণ করে অসংখ্য অনুসারী কটু কাজ করে যাচ্ছে, তার বিরুদ্ধে মানুষ কটুক্তি করবে এটাইতো স্বাভাবিক।
তাছাড়া, অন্যের ধর্মানুভূতিতে আঘাত করার মাধ্যমে যে ধর্ম প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে, যে ধর্মের ধর্মীয় গ্রন্থগুলোতে ভিন্ন ধর্ম ও মতাবলম্বীদের নিয়ে কটুক্তি, ধর্মানুভুতিতে আঘাত এবং হুমকি, যে ধর্মের অনুসারীরা প্রতিনিয়ত অন্যের ধর্ম ও মতাদর্শ নিয়ে কটুক্তি করে, প্রতিদিন পাঁচবার মাইক বাজিয়ে অন্যের ধর্মানুভুতিতে আঘাত করে এবং অন্যের ধর্মকে ছোট করে, তারা কিভাবে অন্যের বিরুদ্ধে ধর্মানুভূতিতে আঘাতের অভিযোগ হানে???
এখন কিছু মানুষ বলতে পারে ব্যক্তি বা মুসলিমরা ইসলাম নয়, ইসলাম হলো কুরআন ও সহিহ হাদিস।
তাহলে আসুন আমরা একটু দেখি কুরআন হাদীসে কিভাবে ভিন্ন মতাদর্শ বা ধর্ম এবং অমুসলিমদের নিয়ে কটুক্তি, ধর্মানুভুতিতে আঘাত এবং হুমকি দেয়া হয়েছে তার সুস্পষ্ট অসংখ্য নমুনার মধ্যে কিছু নমুনা দেখি :
১.অমুসলিমরা পশুর মত, এমনকি তার চেয়েও অধম। ( কুরআন ২৫ : ৪৪) ইহুদি খ্রিস্টানরা গাধা ও গর্দভ (কুরআন ৬২ :৫)
২.নিশ্চয় অমুসলিমরা সবচেয়ে নিকৃষ্ট প্রাণী। ( কুরআন ৮ :৫৫ এবং ৯৮ : ৬)
৩.অমুসলিমরা নোংরা / অপবিত্র। (কুরআন ৯:২৮)
৪.অমুসলিমরা মূর্খ, অন্ধ ও বধির। (কুরআন ২:১৭১)
৫.ইহুদীনাসারা তাদের কিতাব বিকৃত করে ফেলেছে।
(কুরআন ৪ : ৪৬)
৫. মূর্তিপূজা শয়তানের কাজ। ( কুরআন ৫:৯০)
৬.মুসলিম চাকরানীও অমুসলিম অভিজাত নারীর চেয়ে শ্রেষ্ঠ। (কুরআন ২ : ২২১)
৭.কোন মুসলমান অমুসলিমের সঙ্গে বন্ধুত্ব করবে না। (কুরআন ৫৮ : ২২)
৮.অমুসলিমরা অত্যাচারী। ( কুরআন ২: ২৫৪)
৯.অমুসলিমদের সঙ্গে হাত মেলানোর পর মুসলিমরা হাত ধুয়ে ফেলবে। (ইবনে কাথিরের তাফসির, খন্ড-৮ম,৯ম,১০ম,১১শ পৃষ্ঠা নং-৬৭৪)
১০.মূর্তি পুজা মানুষকে বিভ্রান্ত করে। (সূরা ইবরাহীম : ৩৬)
১১.আল্লাহতালা আমাকে মূর্তি ভাঙ্গার জন্য প্রেরণ করেছেন। (সহীহ মুসলিম হা. ৮৩২ sunnah.com)
১২.সকল প্রাণীর মূর্তি বিলুপ্ত করবে এবং সকল সমাধি-সৌধ ভূমিসাৎ করে দিবে (সহীহ মুসলিম হা. ৯৬৯ sunnah.com)
১৩.অমুসলিমদের নিয়ে ব্যঙ্গ কবিতা লিখো। (সহিহ মুসলিম হা. ২৪৮৬ sunnah.com)
১৪. নবী মোহাম্মদ মূর্তি ভেঙেছিলেন ( সহিহ বুখারী হা. ৪২৮৭, ৪৭২০, ২৪৭৮, )
১৫. মূর্তি ভাঙার নির্দেশ ও ইয়েমেনের (ইসলামের বহু পূর্বের) একটি ক্বাবাঘর ভাঙা ও ইবাদতকারীদের গর্দান উড়িয়ে দেয়ার নির্দেশ এবং সম্পাদন।( সহিহ বুখারী ( ৩৮২৩, ৬৩৩৩, ৩০২০,৩০৭৬,৪৩৫৬,৪৩৫৭ sunnah.com)
১৬. হযরত আলী ইসলাম ত্যাগী মূর্তিপূজারিদের মূর্তি পুড়িয়ে দিলো কিন্তু আব্বাস বললো রাসুল বলেছে ধর্মত্যাগীকারীদেরও হত্যা করতে ( সহিহ সুনানে আন নাসায়ী, হা. ৪০৬৫)
১৭. নবী কুরাইশদের ধর্ম নিয়ে কটূক্তি করতেন (সিরাতুল মুস্তফা ১৫৪, ইবনে হিশাম ৬১)
( আগে পরের আয়াত এবং গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যাসমূহ দ্বারাও ভিন্ন কিছু প্রমাণিত হয় না। এসব মূর্তি ভাঙার বিপরীতে ২/১ টা কথা থাকলে তা কখনো এতগুলো দলিলকে বাতিল করতে পারেনা। বরং এগুলো ওই ২/১টা হাদিসকে বাতিল করে বা এটা বুঝায় যে, মুহাম্মদ যখন সংখ্যালঘু ছিলেন তখন মাঝে মাঝে মানবিকতার ছদ্মবেশ ধরেছিলেন কিন্তু সংখ্যাগুরু হওয়ার পর তার প্রকৃত রূপ প্রকাশ পেয়েছিলো।)
অর্থাৎ কুরআন – হাদীস বা মুসলিমরা অন্যের ধর্মানুভুতিতে আঘাত দিয়ে যাবে, অন্যের মতাদর্শ নিয়ে কটুক্তি – সমালোচনা করবে, কিন্তু অন্যেরা ইসলামের সমালোচনা করতে পারবে না; এগুলো কি ধরনের কথাবার্তা?
এখন ভিন্ন মতাদর্শের লোকেরা যদি একই অভিযোগ করে তবে কি মুসলিমরা মানবে? তাহলে তারা কিভাবে ভিন্ন মতাদর্শের মানুষদের বিরুদ্ধে ধর্মানুভুতিতে আঘাতের অভিযোগ হানে? নিজেদের বেলায় বাকস্বাধীনতা কিন্তু অন্যের বেলায় কেন বাকস্বাধীনতা নয়? একটু বিবেক দিয়ে নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে চিন্তা করবেন।
– Forhad H Fahad