সংস্কৃতি নিয়ে আমাদের গোঁড়ামি, ভন্ডামি এবং বদ্ধ মানসিকতা

আমরা নতুন কোন সংস্কৃতি তৈরি করতে পারি না বরং পূর্বপুরুষদের সেকেলে সংস্কৃতির মধ্যেই মানুষকে আবদ্ধ করতে এবং সেটা নিয়েই পড়ে থাকতে চাই, অথচ মানুষের মন নতুনত্ব চায়।

সভ্যতার পরিবর্তনের সাথে সাথে যে মানুষের রুচি ও সংস্কৃতির পরিবর্তন হয়, তা আমরা বুঝার চেষ্টা করি না।

পশ্চিমাদের পূর্বপুরুষদেরও সংস্কৃতি আছে কিন্তু তারা সেটা নিয়ে পড়ে থাকে না বরং তারা নতুন সংস্কৃতি তৈরি করে সেটাকে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় করে তোলে। তখন অধিকাংশ মানুষই সেটা গ্রহণ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে, যদিও মুখে অনেকেই তা অস্বীকার করে (এটা এক প্রকার ভন্ডামি এবং এমন ভন্ডামি করে অনেকে ধরাও খায়)।

অথচ চাইলে আমরা নিজেরাই যুগোপযোগী এবং নতুন সংস্কৃতি তৈরি করতে পারি। আধুনিক সংস্কৃতি অধিকাংশ ক্ষেত্রে পশ্চিমারা তৈরি করলেও সেটা আধুনিক যুগের প্রায় সবার সংস্কৃতিতেই পরিণত হয়।

আমরা তো নিজেরা কিছু তৈরি করতে পারি না বরং পূর্বপুরুষদের আবিষ্কৃত জিনিস নিয়েই পড়ে থাকি এবং চাপাবাজি করে বেড়াই।

আর পশ্চিমারা পূর্বপুরুষদের আবিষ্কার নিয়ে পড়ে থাকার চেষ্টা না করে বরং নতুন কিছু আবিষ্কার করার চেষ্টা করে বা তৈরিও করে। আমাদের উচিত তাদের হিংসা না করে বরং তাদের কাছ থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে নিজেদের পূর্বপুরুষদের সংস্কৃতি নিয়ে পড়ে না থেকে নতুন সংস্কৃতি তৈরি করা বা সেসব সংস্কৃতির সংস্কার করা।

প্রকৃতপক্ষে পশ্চিমা সংস্কৃতি বলতে কিছু নেই।

নিন্দুক এবং গোঁড়া লোকেরা আধুনিক সংস্কৃতিকে পশ্চিমা সংস্কৃতি বলে থাকে।

পশ্চিমারা তাদের পূর্বপুরুষদের অধিকাংশ সংস্কৃতিই জাদুঘরে রেখে এসেছে।কারণ, তারা জানে যে সংস্কৃতি পরিবর্তনশীল এবং মানুষের মন নতুনত্ব চায়। এটা বুঝে না শুধু অনুন্নত দেশের গোঁড়া লোকেরা।

অন্ধভাবে কোন সংস্কৃতিতে সমর্থন এবং অসমর্থন দুটোরই বিরোধী আমি। আমার কথা হলো যেটা ইতিবাচক বা সুন্দর, যৌক্তিক এবং মানবিক সেটা গ্রহণ করতে হবে।

কিন্তু আমাদের দেশের আধুনিক বা পশ্চিমা সভ্যতার সকল সুযোগ সুবিধা নেয়া সত্ত্বেও তারা অন্ধভাবে আধুনিক সংস্কৃতির বিরোধিতা করে পশ্চিমা বা বিদেশি সংস্কৃতি বলে। অথচ ১৪০০ বছর পূর্বের আরবের মধ্যযুগীয় বর্বর সংস্কৃতিকে তারা ঠিকই বুকে টেনে নিয়ে বিশেষভাবে নারীদের উপর তা চাপিয়ে দেয় বিভিন্ন লৌকিক এবং অলৌকিক ভয়-ভীতি দেখিয়ে। তখন তাদের মাথায় আসে না যে এটাতো দেশি সংস্কৃতি নয় বরং বিদেশি এবং এটা জোরপূর্বক চাপানো হচ্ছে।

অথচ আধুনিক বা পশ্চিমা সংস্কৃতি কারো উপর জোর করে বা ভয়-ভীতি দেখিয়ে চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে না বরং মানুষ স্বাচ্ছন্দ্যেই তা গ্রহণ করছে। অন্যদিকে মধ্যযুগীয় সেই বর্বর সংস্কৃতি মানুষকে অলৌকিক ভয় দেখিয়ে এবং সরাসরি চাপ প্রয়োগ তা গ্রহণ করানো হচ্ছে।

  • Forhad H Fahad

    Related Posts

    আমাদের জাতীয় সঙ্গীত কি হিন্দু শাক্তদেবী মা-কালীকে উদ্দেশ্য করে লেখা?

    শায়েখ আবদুর রাজ্জাক বিন ইউসুফ তার বহু ধর্মীয় বক্তৃতায় বলেছেন, এ দেশের জাতীয় সংগীত বাতিল করতে হবে। জাতীয় সংগীতে ঠাকুর যতবার বলেছে—ওমা তোমার আকাশ তোমার বাতাস, ততবার ঠাকুর কালি-মাকে উদ্দেশ্য করে বলেছে, ও কালি-মা তোমার আকাশ, তোমার বাতাস! আমি ৩২ বছর ধরে বলে আসছি, কালি-মার বাপের আকাশ? আকাশ আল্লার, বাতাস আল্লার। এই হচ্ছে আমাদের দেশের শীর্ষস্থানীয় একজন আলেমের জ্ঞান! বাংলাদেশের মুসলমানদের দুর্ভাগ্য হচ্ছে তারা রবীন্দ্রসাহিত্য পড়ে না। না পড়েই…

    Read more

    একেই কি বলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা?

    ১. ভাই, প্রধানমন্ত্রী তো বলেছে—ইসলামের সমালোচনা করে লেখার কারণে কোনো অঘটন ঘটলে দায় সরকার নেবে না। —ওরে বোকা! দায় নেয়ার জন্য তো আনসারুল্লাহ বাংলা টিমকে রেডি রাখা হয়েছে। চুপ থাক্‌ ব্যাটা! বেশি কথা বললে বিম্পি-জামাত ক্ষমতায় চলে আসবে। ২. ভাই, নাস্তিকদের ফাঁসি চেয়ে ৫ মে ২০১৩ তে হেফাজতের রক্তক্ষয়ী দাবিদাওয়ার পর অভিজিৎ, ওয়াশিকুর, অনন্ত, নিলয়, দীপন, নাজিমুদ্দিন, জুলহাজরা খুন হওয়ার কিছুদিন আগে প্রধানমন্ত্রী পরিষ্কার গলায় বলেছিলেন ধর্ম অবমাননাকারী নাস্তিক…

    Read more

    Leave a Reply

    Your email address will not be published. Required fields are marked *

    Latest

    আমাদের জাতীয় সঙ্গীত কি হিন্দু শাক্তদেবী মা-কালীকে উদ্দেশ্য করে লেখা?

    আমাদের জাতীয় সঙ্গীত কি হিন্দু শাক্তদেবী মা-কালীকে উদ্দেশ্য করে লেখা?

    একেই কি বলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা?

    একেই কি বলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা?

    কর্ণচিকিৎসা

    কর্ণচিকিৎসা

    তাকদীর বিষয়ক রেফারেন্স

    তাকদীর বিষয়ক রেফারেন্স
    কুদরত

    পরকাল নিয়ে মুমিনদের বহুল জিজ্ঞেসিত প্রশ্নের জবাব

    পরকাল নিয়ে মুমিনদের বহুল জিজ্ঞেসিত প্রশ্নের জবাব