আমাদের মানবিক সভ্য হতে হবে, শুধু সভ্য বা অমানবিক সভ্য নয়

মানুষের নগ্নতা নিয়ে যারা ব্ল্যাকমেইল করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে থাকতে হবে এবং তড়িৎ ব্যবস্থা নিতে হবে। এক্ষেত্রে কোন ভিক্টিম যদি অভিযোগ করে তবে পুলিশের সিরিয়াসলি এটা নিতে হবে, প্রয়োজনে এটার জন্য আলাদা ডিপার্টমেন্ট করতে হবে যেখানে মহিলা পুলিশ থাকবে এবং তারা ঠিকমতো অভিযোগ ও ব্যবস্থা নিচ্ছে কিনা সেটার মতামত জানাতে আলাদা বক্স থাকবে।

এছাড়াও বিশেষভাবে প্রতিটি স্কুল কলেজে এসব নিয়ে কথা বলতে হবে অথবা সেক্স এজুকেশন চালু করতে হবেই এবং এর মধ্যে এসব বিষয়ক একটি চ্যাপ্টার রাখতে হবে। কেউ এমন ব্ল্যাকমেইলিংয়ের স্বীকার হলে কি করবে, কিভাবে সহজেই আইনি ব্যবস্থা নিবে সেসব ব্যাপারে জ্ঞাত করতে হবে এবং ভিক্টিমকে সতর্ক করা যাবে কিন্তু দোষারোপ নয়। আর অপরাধীদের কি কঠোর পরিণতি হবে সেটাও উদাহরণসহ বলতে হবে যেন কোন ভিক্টিম এটা না ভাবে যে অপরাধীর তো কিছুই হবে না ৷ অপরাধীরাও এসব করার আগে শতবার ভাববে।

পাশাপাশি নগ্নতাকে স্বাভাবিক করতে হবে। এর মানে এই নয় যে আমরা চাই মানুষ উলঙ্গ হয়ে চলাফেরা করবে। বরং মানুষ মাঝে মাঝে উলঙ্গ হয়ে প্রকৃতির সাথে একাত্মতা পোষণ করতেই পারে। সে মাঝে মাঝে উলঙ্গ থাকতেই পারে এবং এটাকে স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে হবে। তাছাড়া, পোশাকের দীর্ঘ সময়ের বাধ্যবাধকতার কারণে নগ্নতাট্যাবু যখন মানবতার জন্য হুমকি হয়ে দাড়ায়, তখন নগ্নতার পক্ষে কথা বলতেই হয়। কারণ, আমাদের কাছে সবার আগে মানবতা, শারীরিক লজ্জা নয়।

লজ্জা কিছুটা থাকতেই পারে, তাই বলে ততটা নয় যতটা লজ্জার কারণে একজন মানুষ, বিশেষভাবে একজন নারী কঠিন ব্ল্যাকমেইলিংয়ের শিকার হয় বা আআত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিতে হয়। তাছাড়া, পোশাক মূলত ফ্যাশন এবং কিছু সময়ের জন্য প্রয়োজন, তবে সেটা সার্বক্ষণিকের জন্য নয়।

কাউকে বস্ত্রহীন বা বিশেষ বস্ত্র অবস্থায় কেউ দেখে ফেললে, ছবি তুললে বা ভিডিও করলে, নগ্ন বা ন্যুড ছবি পাওয়া গেলে বা সুপার এডিটিং, দেখতে অনেকটা তার মতো এমন কারো ভিডিও তার নামে প্রচার করলে এগুলো যেন তার জন্য ব্ল্যাকমেইলিং এর স্বীকার হওয়া, ধর্ষিত হওয়া, আত্মহত্যা বা কঠিন ডিপ্রেশনে যাওয়ার কারণ না হয় অর্থাৎ এগুলো দিয়ে তাকে যেন ব্ল্যাকমেইল করা না যায়। এমন একটি পরিস্থিতি সৃষ্টি করা যায় নগ্নতাট্যাবু ভাঙা এবং মানসিকতা পরিবর্তনের মাধ্যমেই।

একজন মানুষ বাসায় বা বিশেষ কোথাও নগ্ন থাকবে নাকি কারো সাথে কোথাও সেক্স করবে এটা নিয়ে কেন মানুষের এতো হিংসাত্মক এবং ব্যাঙ্গাত্মক ইন্টারেস্ট থাকবে? কেন, হিংসুটেরা কি সেক্স করতে পারে না? না পারলে কিভাবে সেক্সও করতে পারে সেটার সমাধান বের করুক বা আমরা সমাধান বের করবো। আমরা তো চাই মানুষ সেক্স করুক। আমাদের তো কারো সেক্স করা নিয়ে চুলকানি নেই।

যাই হোক, আমি মনে করি সভ্যতার চেয়ে মানবতা এবং মানুষের অধিকার বড়। অমানবিক সভ্যতার বিরোধী আমি। আমাদের বুঝতে হবে যে সব সভ্যতা ভালো উপকারী নয়। যেমন : বন উজাড় করা, পাহাড় কাটা এসবও তো সভ্যতা, কিন্তু এগুলো কি ভালো?

না, ভালো না। অর্থাৎ, আমাদের মানবিক সভ্য হতে হবে, শুধু সভ্য বা অমানবিক সভ্য নয়৷ কেউ যদি পোশাক কম পরে তবে কিন্তু সে প্রকৃতির বরং উপকার করছে। তাছাড়া, পোশাক কিন্তু মূলত এমন কোন জিনিস নয় যেটা ছাড়া সে বাঁচতে পারে না।

পোশাক অবশ্যই সভ্যতা, তার মানে এই নয় যে যে যত বেশি পোশাক পরবে সে তত সভ্য বা সেটা পজিটিভ। বিল্ডিং বানানোও সভ্যতা, তাই বলে একটা জায়গায় সব গাছাপালা কেটে একসাথে অনেকগুলো বিল্ডিং করলে সেটা তো পজিটিভ এবং স্বাস্থ্যকর নয়। মানুষের যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু পোশাক পরবে এবং কারো যদি কিছু সময় পোশাক ছাড়া থাকতে ইচ্ছে করে সে থাকবে।

মানুষ মূলত তার সুবিধার জন্য পোশাক পরতো। যেমন : মানুষ শুধু প্রয়োজনেই পোশাক পরতো না, বরং বিলাসিতা বা সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে এবং বৈষম্য সৃষ্টি করতে ( নিজেকে অন্যের চেয়ে উৎকৃষ্ট হিসেবে দেখাতেও ) পোশাক পরতো। পরবর্তীতে নারীদের বন্ধি করা এবং যৌনবস্তু বানানোর জন্যও পোশাকের ব্যবহার হয়।

কিন্তু এই সভ্যতার বাধ্যবাধকতা যখন মানবতার জন্য হুমকি হয়ে দাড়াচ্ছে, তখন আমাদের দ্বিতীয়বার এটাকে নিয়ে ভাবতে হবে এবং কিভাবে এই ট্যাবু ভেঙে মানবতাকে মুক্তি দেয়া যায় সেটার চেষ্টা করতে হবে।

এবার আমার কৈশোরের একটা ছোট ঘটনা বলি :

আমি একটু চুপচাপ ছিলাম বলে দুষ্ট কাজিনরা আমাকে ব্যাঙ্গ করে রাগিয়ে তারা মজা নিতো এবং আমি কষ্ট পেতাম ও কান্না করতাম। তারপর আমার এক আপু পরামর্শ দিয়েছিলো যে আমি যেন তাদের কথাকে পাত্তাই না দেই ; পারলে যেন উল্টো হাসি ; তাহলে আমাকে ব্যাঙ্গ করে তারা মজা পাবে না। ফলে তারা এটা করা বন্ধ করবে। আমিও তাই করলাম এবং সেটাই হলো। কারণ আমিতো এখন আর লজ্জাই পাই না, তারা আমার ক্ষতি করবে কিভাবে? তাই তারা আমাকে বিরক্ত করার চেষ্টা করেও তা বন্ধ করে দিয়েছিলো।

আর মানুষের শারীরিক লজ্জাবোধও এতোটা তীব্র হওয়া উচিত নয় যে এটা তার স্বাধীনতা এবং অধিকার হরণ করে বা তার এই লজ্জার সুযোগ নিয়ে তার ক্ষতি করতে পারে। লজ্জাতো শরীর বা যৌনতায় নয়, বরং অপরাধ বা অন্যায়মূলক কর্মকাণ্ডের ক্ষেত্রে তীব্র থাকা উচিৎ, শরীর বা যৌনতার ক্ষেত্রে নয়৷

অথচ আমাদের সমাজে অন্যায় অপরাধ এতটাই স্বাভাবিক যে এসব করলে বা ফাঁস হলে মানুষ এতোটা লজ্জার বিষয় মনে করে না, যতটা শারীরিক বা যৌনতার ক্ষেত্রে মনে করে। অথচ এগুলো অন্যের কোন ক্ষতি করছে না, অপরাধ নয় বরং মানুষের স্বাভাবিক, প্রাকৃতিক চাহিদা এবং অধিকার। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডগুলো সমাজে স্বাভাবিক হয়ে গেলেও যৌনতা এবং নগ্নতার মতো একটা ভালো কাজকে আমরা স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছি না যার ফলে খারাপ লোকেরা নগ্নতা এবং যৌনতাকে বড় বড় অপরাধের হাতিয়ার ব্যবহার করে। আবার এগুলো ট্যাবু বলেই এগুলোর প্রতি মানুষের আগ্রহ সীমা অতিরিক্ত, স্বাভাবিক নয়৷

আসলে আমাদের পূর্বপুরুষরা গোড়াতেই গলদ করেছিলো বা কোন একসময় থেকে বিশেষ প্রয়োজনে এই গলদ বা তারা করেছিলো এবং পরবর্তীতে এটা বাধ্যবাধক হয়ে গিয়েছে। তারা প্রকৃত অপরাধের প্রতি মানুষের লজ্জাবোধ না বাড়িয়ে বরং নিরপরাধ শরীর এবং যৌনতার প্রতি লজ্জাবোধ বাড়িয়েছে। এখন যেভাবেই হোক, আমাদের সেটা ঠিক করতে হবে এবং সম্ভব।

  • Related Posts

    রুমডেট পর্ব -১

    প্রেম হওয়ার ৬ মাসের মাথায় প্রথমবারের মতো রুমডেটিংয়ে এসে আরিফ এবং ফারহানা পরস্পরকে খুব নিবিড়বন্ধনে জড়িয়ে শুয়ে আছে। বাইরে বৃষ্টি। মাঝেমধ্যে বজ্রপাতের শিহরণ। আরিফ তার খোলা বুক দিয়ে অনুভব করছে ফারহানার হৃদয়কম্পন। এমন সময় আরিফ ফারহানাকে জিজ্ঞেস করে : জান, তুমি কী দেখে আমাকে এত ভালোবাসলে? আমার মধ্যে কীএমন পেয়েছ? ফারহানা ফিসফিস করে উত্তর দেয় : ‘সোনাপাখী তোমার মধ্যে আমি যা পেয়েছি তা হলো—উত্তম চরিত্র। তুমি পাঁচওয়াক্ত নামাজ পড়ো।…

    Read more

    হজ্জ ও বিবিধ প্রসঙ্গ

    “মক্কা গিয়ে হজ্জ করিয়ে খরচ করলি যে টাকা সে টাকা গরীবকে দিলে গরীব আর থাকে কেডা,তর ঘরের ধন খা পরে পরে দেশের লোক না খাইয়া মরে সত্যি কথা কথা বললে পরে দেশে থাকতে দিবি না।”  মাতাল রাজ্জাক! প্রত্যেক ধনবান নারী পুরুষের জন্য একবার হজ্জে যাওয়া ফরজ। এখানে ধনবান শব্দটা দিয়ে এটাই নির্দেশ করে যে কিছু মানুষের সামর্থ্য থাকবে না, অর্থাৎ, দুনিয়া নামক পরীক্ষার হলে তিনিই বৈষম্যটা শুরু করেছেন। হজ্জ…

    Read more

    Leave a Reply

    Your email address will not be published. Required fields are marked *

    Latest

    আমাদের জাতীয় সঙ্গীত কি হিন্দু শাক্তদেবী মা-কালীকে উদ্দেশ্য করে লেখা?

    আমাদের জাতীয় সঙ্গীত কি হিন্দু শাক্তদেবী মা-কালীকে উদ্দেশ্য করে লেখা?

    একেই কি বলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা?

    একেই কি বলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা?

    কর্ণচিকিৎসা

    কর্ণচিকিৎসা

    তাকদীর বিষয়ক রেফারেন্স

    তাকদীর বিষয়ক রেফারেন্স
    কুদরত

    পরকাল নিয়ে মুমিনদের বহুল জিজ্ঞেসিত প্রশ্নের জবাব

    পরকাল নিয়ে মুমিনদের বহুল জিজ্ঞেসিত প্রশ্নের জবাব