ছবি ও আধুনিকতার সংঘর্ষ :

ধর্ম মানে জীবন বিধান। জীবন বিধানের যে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য থাকা দরকার তা হলো নমনীয়তা। ইসলাম ধর্ম আধুনিকতার সাথে খাপ খাওয়াতে গিয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বিষয় হারাম, হালাল নিয়ে ফ্যাতনা সৃষ্টি করে। যে ধর্ম আজ থেকে ১০০০ বছর কি হবে বলতে পারে না, সে ধর্মকে কি করে আধুনিক সার্বজনীন ধর্ম বলা যেতে পারে?

আমরা এখন ও, এই ২১ শতকে ও দেখি রোগবালাই হলে ঝাড়ফুক, তাবিজ কবজে বিশ্বাস করে অনেক মানুষ। ফলে অনেকের অকাল মৃত্যু ঘটে। ধর্মীয় গোড়ামির কারনে ঠিকমত সিজার না করায় অনেক মাকে মৃত্যু বরন করতে হয়। 

১৯৮০ র দশকের কথা বলি। তখন শিশু মৃত্যুর হার ছিল এখনের তুলনায় অনেক। শিশু জন্মগ্রহন করার পর তার নারি কাটা হত বাশের কন্সি দিয়ে। ফলে বাঁশের কন্সিতে থাকত জীবানু। এভাবে শিশুটা জলাতঙ্কে আক্রান্ত হত। শিশুটা জলাতঙ্কে আক্রান্ত হওয়ার কারনে সারাক্ষণ ননস্টপ কান্না করত, আর শিশুর মা বাবা আত্মীয় স্বজন সবাই বলত জ্বীনে ধরছে। ধর্মের সমাধান জ্বীনে ধরছে। কবিরাজের কাছে দৌড়ঝাঁপ। অবশেষে মৃত্যু। এই সমাধানটা পড়ে, ডাক্তাররা ই করেছে কোন অবতার বা মোল্লা না। 

একটা সময় ছবি তোলাকে হারাম মনে করা হত, এখনও ছবি তোলাকে ইসলামিক মাইন্ডের লোক ভালো চোখে দেখা না, তবে তারাই বেশি ছবি তুলে। তাদের ওয়াজের ভিডিও চলে। ভিডিও না করলে মোল্লা সাহেব মন খারাপ করে। শেখ মুজিবুরের ছবি সংবলিত ১০০০ হাজার নোট অথবা ছবি সংবলিত ডলার হারাম না আরাম। 

বাংলা টেলিভিশন নামে একটা সিনেমা আছে। অনেকদিন আগে দেখেছিলাম। গায়ের মাতব্বরের জন্য কেউ টেলিভিশন আনতে পারে না।তবে তার ছেলে গঞ্জে গিয়ে সিনেমা হলে সিনেমা দেখে। এক সে মাতব্বর হজ্জে যাওয়ার জন্য মনস্থির করল। কিন্ত বিশেষ কারণে সে ঐ বার হজ্জে যেতে পারে নি। তখন ই তিনি টেলিভিশনে হজ্জের ভিডিও দেখে আভেগে আপ্লূত হয়ে যায়। ভন্ডদের একটু বেশি ই আভেগ। গোড়াদের আভেগ ভয়ংকর। তার আভেগের বশে কত মানুষের প্রাণ নিয়ে নেই।

গান আত্মার খোরাক। গান গাওয়া হারাম। সুর করে ওয়াজ করা হালাল। কোর আন ও সুর করে পড়ে। ইসলামী গজলে হিন্দি গানের সুর চুরি করে গাওয়া হালাল।ইসলামে মোল্লাদের মত হিপোক্রেট খুব কম প্রজাতি পৃথিবীর বুকে আছে। তাদের সুবিধা মত সব হালাল, তাদের বিপক্ষে গেলে হারাম। 

এগুলো সম্পর্কে হাদিসের রেফারেন্স :

**আরবি:**  

اللَّهُمَّ رَبَّ النَّاسِ أَذْهِبِ الْبَاسَ، اشْفِ أَنْتَ الشَّافِي، لَا شِفَاءَ إِلَّا شِفَاؤُكَ، شِفَاءً لَا يُغَادِرُ سَقَمًا

**উচ্চারণ:**  

“আল্লাহুম্মা রাব্বান-নাস, আযহিবিল-বা’সা, ইশ্ফি, আনতাশ-শাফি, লা শিফা’য়া ইল্লা শিফাউক, শিফা’য়াল লা ইউগাদিরু সাক্বামা।”

**বাংলা অর্থ:**  

“হে আল্লাহ, মানবজাতির প্রতিপালক! কষ্ট দূর করে দিন, আপনি হলেন সুস্থকারী। আপনার সুস্থতা ব্যতীত কোনো সুস্থতা নেই, এমন সুস্থতা দিন যাতে কোনো অসুস্থতা অবশিষ্ট না থাকে।”

### হাদিস

1. **সহিহ বুখারি**:

   – আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত: নবী মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, “প্রত্যেক ছবি আঁকিয়ে জাহান্নামে যাবে। আল্লাহ তাকে শাস্তি দেবেন যতক্ষণ না সে যা আঁকেছিল তা জীবিত করতে পারবে। তবে তা সে কখনোই করতে পারবে না।” (সহিহ বুখারি, হাদিস নম্বর 5950)

2. **সহিহ মুসলিম**:

   – ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত: নবী মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, “যারা এই ছবিগুলো আঁকবে, তারা কিয়ামতের দিন শাস্তি পাবে এবং বলা হবে, ‘তোমরা যা তৈরি করেছো তাকে জীবিত করো’।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস নম্বর 2109)

### কোরআনের আয়াত

কোরআনে সরাসরি ছবি আঁকা বা চিত্রকর্ম সম্পর্কে কোনো নির্দিষ্ট আয়াত নেই। তবে, কিছু আয়াত রয়েছে যেখানে মূর্তি বা প্রতিমা তৈরি ও পূজার বিরুদ্ধে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সেগুলো থেকে ইসলামের মূলনীতি বোঝা যায়। যেমন:

1. **সুরা আল-আন’আম (6:74)**:

   – “আর স্মরণ কর, যখন ইব্রাহিম তার পিতাকে বললেন, ‘আপনি কি প্রতিমাগুলোকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করেছেন? আমি তো আপনাকে এবং আপনার সম্প্রদায়কে স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে দেখছি।’”

2. **সুরা আশ-শুআরা (26:69-70)**:

   – “আর আপনি তাদেরকে ইব্রাহিমের কাহিনী শুনিয়ে দিন। যখন তিনি তার পিতাকে ও তার সম্প্রদায়কে বললেন, ‘তোমরা কী পূজা করছো?’”

ইসলামের এসব নির্দেশনা থেকে বোঝা যায় যে, জীবন্ত প্রাণীর ছবি আঁকাকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে এবং মূর্তি বা প্রতিমা তৈরি ও পূজার বিরুদ্ধে কঠোরভাবে নির্দেশ দেওয়া

  • Alamin Mia

    Related Posts

    রুমডেট পর্ব -১

    প্রেম হওয়ার ৬ মাসের মাথায় প্রথমবারের মতো রুমডেটিংয়ে এসে আরিফ এবং ফারহানা পরস্পরকে খুব নিবিড়বন্ধনে জড়িয়ে শুয়ে আছে। বাইরে বৃষ্টি। মাঝেমধ্যে বজ্রপাতের শিহরণ। আরিফ তার খোলা বুক দিয়ে অনুভব করছে ফারহানার হৃদয়কম্পন। এমন সময় আরিফ ফারহানাকে জিজ্ঞেস করে : জান, তুমি কী দেখে আমাকে এত ভালোবাসলে? আমার মধ্যে কীএমন পেয়েছ? ফারহানা ফিসফিস করে উত্তর দেয় : ‘সোনাপাখী তোমার মধ্যে আমি যা পেয়েছি তা হলো—উত্তম চরিত্র। তুমি পাঁচওয়াক্ত নামাজ পড়ো।…

    Read more

    হজ্জ ও বিবিধ প্রসঙ্গ

    “মক্কা গিয়ে হজ্জ করিয়ে খরচ করলি যে টাকা সে টাকা গরীবকে দিলে গরীব আর থাকে কেডা,তর ঘরের ধন খা পরে পরে দেশের লোক না খাইয়া মরে সত্যি কথা কথা বললে পরে দেশে থাকতে দিবি না।”  মাতাল রাজ্জাক! প্রত্যেক ধনবান নারী পুরুষের জন্য একবার হজ্জে যাওয়া ফরজ। এখানে ধনবান শব্দটা দিয়ে এটাই নির্দেশ করে যে কিছু মানুষের সামর্থ্য থাকবে না, অর্থাৎ, দুনিয়া নামক পরীক্ষার হলে তিনিই বৈষম্যটা শুরু করেছেন। হজ্জ…

    Read more

    Leave a Reply

    Your email address will not be published. Required fields are marked *

    Latest

    আমাদের জাতীয় সঙ্গীত কি হিন্দু শাক্তদেবী মা-কালীকে উদ্দেশ্য করে লেখা?

    আমাদের জাতীয় সঙ্গীত কি হিন্দু শাক্তদেবী মা-কালীকে উদ্দেশ্য করে লেখা?

    একেই কি বলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা?

    একেই কি বলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা?

    কর্ণচিকিৎসা

    কর্ণচিকিৎসা

    তাকদীর বিষয়ক রেফারেন্স

    তাকদীর বিষয়ক রেফারেন্স
    কুদরত

    পরকাল নিয়ে মুমিনদের বহুল জিজ্ঞেসিত প্রশ্নের জবাব

    পরকাল নিয়ে মুমিনদের বহুল জিজ্ঞেসিত প্রশ্নের জবাব