কোরবানি ও পাশবিকতা

কোরবানি শব্দটা মাথায় আসলে পশু জবেহ করার একটা দৃশ্য আমার চোখের সমানে দৃশ্যমান হয়। মুসলিম পরিবারে জন্ম হওয়ায় ছোট থেকে এসব দেখেই বড় হয়েছি। পশুটাকে যখন মাটিতে জোরজবরদস্তি করে শোয়ানো হত, তখন কি নিষ্ঠুর ই না লাগত!

আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য কোরবানি দেওয়া হয়। আল্লাহর রাস্তায় কত মানুষ কোরবানি হয়েছে, কিন্তু একটি পশু কোরবানি হতে রাজি হয় না। কারণ, সে ভালো করে জানে আল্লাহ বলতে পৃথিবীতে কিছু নেই। যদিও ইসলাম বলে যে পশুপাখি সবাই নাকি আল্লাহকে চিনে, শুধু মানুষই চিনতে পারে না।  

কোরবানি দেওয়া বা মাংস খাওয়া নিয়ে আমার তেমন কোন সমস্যা নেই, যেহেতু মানুষের নিজের প্রয়োজনে এটা করছে এবং বিকল্প সহজলভ্য ব্যবস্থা নেই বলে এটা করে, তবে এ কেমন আল্লাহ, যাকে পশু হত্যা করে সন্তুষ্ট করতে হয়, তার কিসের প্রয়োজন? একজন মহান দয়ালু সত্ত্বার কিভাবে অবলা প্রাণীর রক্ত এতো প্রিয় হতে পারে? বস্তুত, কালী এবং আর আল্লাহর মাঝে কোন পার্থক্য নেই।

তাছাড়া কোরবানি সরাসরি মুসলিমদের হিংস্রতা শিক্ষা দেয়। যেহেতু কোরবানির সময় পাবলিকলি পৈশাচিক আনন্দ নিয়ে পশু জবেহ করা হয়, সেখানে অনেক শিশু উপস্থিত থাকে। ফলে এই জবেহ করার দৃশ্য তার মস্তিষ্কে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলে। যা তাকে পরবর্তীতে সহিংসতায় জড়াতে প্রভাবিত করে। এ বিষয়ে একটা গবেষণা পরিচালনা করা খুবই দরকার। 

কেরবানির পর প্রায় দেখা যায়, কোরবানি উচ্ছিষ্ট বর্জ্য যেখানে সেখানে ফেলা রাখা হয়। যেহেতু যেখানে সেখানে এটা করা হয়, এর দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। তার সাথে রোগ-বলাই তো আছেই।

সামর্থ্য থাকা স্বত্ত্বেও কোরবানি না করলে তাকে ইদগাহতে যেতে মানা করা ইসলামের পাশবিক দিকই প্রকাশ করে।  কোন কোন মুসলিম জন্ম থেকে পশু প্রেমিক হতে পারে, সে কোরবানি নাই করতে পারে অথবা ভবিষ্যত বিবেচনায় টাকা পয়সা থাকা সত্ত্বেও সে কোরবানি নাই করতে পারে। তাই বলে তাকে একঘরে করে দেওয়া হবে!এগুলো কি শান্তির নমুনা?

আচ্ছা, আপনিই বলুন পিতাকে আদেশ করা হলো পুত্রকে কোরবানি করতে, তাও আবার স্বপ্নে। মুসা, ইসা, মুহাম্মাদকে শুনেছি দৈব বানীতে নির্দেশ দিত, অন্যদিকে ইব্রাহিমকে স্বপ্ন দেখাল। আর আমরা জানি স্বপ্ন মস্তিষ্কের কারসাজি ছাড়া কিছু নয়। আপনি আজ স্বপ্নে দেখলেন, আপনার সিন্ধুকে এক বস্তা টাকা সকালে উঠে দেখলেন কিছুই নেই। তাছাড়া পুত্রকে কোরবানি করার আদেশ দেওয়া বর্বরতা ছাড়া আর কি ই বা হতে পারে! এতো থার্ডক্লাশ পরীক্ষা কি কোন মহান সৃষ্টিকর্তা নিতে পারে?

চতুষ্পদ প্রানীদের কোরবানি করতে বলা হলো। এমন ঘোষনাও করা হলো কিয়ামতের দিন তাদের শিং, লোম, চামড়া ইত্যাদি উঠানো হবে। তাহলে শুকুর, গন্ডার, জিরাফ, সিংহ, বাঘ ইত্যাদিকে কেন অন্তুরভুক্ত করা হলো না? এখন বলবেন এসব প্রাণীতে ভাইরাস ব্যকটেরিয়া আছে ইত্যাদি। কিন্তু আল্লাহ তো বলেন আমি সবাইকে সমানভাবে সৃষ্টি করেছি। সমস্ত পৃথিবীর সব আমার পরিজন। দ্বিমুখী নীতি। 

আসুন দেখি কোরবানি সম্পর্কে কোরআন হাদিস কি বলে :

১. আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: “রাসূলুল্লাহ (সা.) দুইটি শিংওয়ালা সাদা-কালো মিশ্রিত রংয়ের মেষ পশু কোরবানি করতেন।” (সহীহ মুসলিম: ১৯৬৬)

২. রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন: “যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কোরবানি করে না, সে যেন আমাদের ঈদগাহের নিকট না আসে।” (ইবনে মাজাহ: ৩১২৩)

৩. আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন: “আদম সন্তানের কোন কাজ কোরবানির দিন আল্লাহর নিকট রক্ত প্রবাহিত করার চেয়ে অধিক প্রিয় নয়। এবং কোরবানির পশু কিয়ামতের দিন নিজ শিং, পশম ও খুর সহকারে আগমন করবে। এবং কোরবানির রক্ত জমিনে পড়ার আগেই আল্লাহর নিকট মর্যাদা পায়। অতএব, তোমরা খুশি মনে কোরবানি কর।” (তিরমিযি: ১৪৯)

১. **সূরা আল-হজ্ব (২২:৩৪-৩৭)**:

   – “প্রত্যেক উম্মতের জন্য আমি কোরবানির নিয়ম ঠিক করে দিয়েছি, যাতে তারা চতুষ্পদ জন্তু কোরবানি করার সময় আল্লাহর নাম স্মরণ করে।” (২২:৩৪)

   – “তাদের গোশত ও রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছে না, বরং তোমাদের তাকওয়া পৌঁছে যায়।” (২২:৩৭)

২. **সূরা আস-সাফফাত (৩৭:১০৭-১০৮)**:

   – “এবং আমি তাকে এক মহান কোরবানি দ্বারা মুক্ত করলাম।” (৩৭:১০৭)

   – “এবং আমি তার জন্য পরবর্তীদের মধ্যে এ স্মরণীয় রেখেছি।” (৩৭:১০৮)

৩. **সূরা কাওসার (১০৮:২)**:

   – “অতএব, তোমার প্রভুর উদ্দেশ্যে নামাজ পড়ো এবং কোরবানি করো।” (১০৮:২)

  • Related Posts

    রুমডেট পর্ব -১

    প্রেম হওয়ার ৬ মাসের মাথায় প্রথমবারের মতো রুমডেটিংয়ে এসে আরিফ এবং ফারহানা পরস্পরকে খুব নিবিড়বন্ধনে জড়িয়ে শুয়ে আছে। বাইরে বৃষ্টি। মাঝেমধ্যে বজ্রপাতের শিহরণ। আরিফ তার খোলা বুক দিয়ে অনুভব করছে ফারহানার হৃদয়কম্পন। এমন সময় আরিফ ফারহানাকে জিজ্ঞেস করে : জান, তুমি কী দেখে আমাকে এত ভালোবাসলে? আমার মধ্যে কীএমন পেয়েছ? ফারহানা ফিসফিস করে উত্তর দেয় : ‘সোনাপাখী তোমার মধ্যে আমি যা পেয়েছি তা হলো—উত্তম চরিত্র। তুমি পাঁচওয়াক্ত নামাজ পড়ো।…

    Read more

    হজ্জ ও বিবিধ প্রসঙ্গ

    “মক্কা গিয়ে হজ্জ করিয়ে খরচ করলি যে টাকা সে টাকা গরীবকে দিলে গরীব আর থাকে কেডা,তর ঘরের ধন খা পরে পরে দেশের লোক না খাইয়া মরে সত্যি কথা কথা বললে পরে দেশে থাকতে দিবি না।”  মাতাল রাজ্জাক! প্রত্যেক ধনবান নারী পুরুষের জন্য একবার হজ্জে যাওয়া ফরজ। এখানে ধনবান শব্দটা দিয়ে এটাই নির্দেশ করে যে কিছু মানুষের সামর্থ্য থাকবে না, অর্থাৎ, দুনিয়া নামক পরীক্ষার হলে তিনিই বৈষম্যটা শুরু করেছেন। হজ্জ…

    Read more

    Leave a Reply

    Your email address will not be published. Required fields are marked *

    Latest

    আমাদের জাতীয় সঙ্গীত কি হিন্দু শাক্তদেবী মা-কালীকে উদ্দেশ্য করে লেখা?

    আমাদের জাতীয় সঙ্গীত কি হিন্দু শাক্তদেবী মা-কালীকে উদ্দেশ্য করে লেখা?

    একেই কি বলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা?

    একেই কি বলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা?

    কর্ণচিকিৎসা

    কর্ণচিকিৎসা

    তাকদীর বিষয়ক রেফারেন্স

    তাকদীর বিষয়ক রেফারেন্স
    কুদরত

    পরকাল নিয়ে মুমিনদের বহুল জিজ্ঞেসিত প্রশ্নের জবাব

    পরকাল নিয়ে মুমিনদের বহুল জিজ্ঞেসিত প্রশ্নের জবাব