প্রশ্ন : পরকাল না থাকলে যেসব অপরাধীদের দুনিয়াতে উপযুক্ত শাস্তি দেয়া সম্ভব হচ্ছে না তাদের বিচার কিভাবে হবে?
জবাব :
১. আপাততদৃষ্টিতে যদিও আমরা ধরে নিই যে পরকাল থাকলে আসলেই অপরাধীদের উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত হতো এবং খুব ভালো হতো, তার মানে কি এই যে পরকাল আছে বা পরকাল সত্য? অর্থাৎ কোনকিছু হলে বা থাকলে ভালো হতো, তার মানে তো এই নয় যে সেটা সত্য বা আছে।
উদাহরণসরূপ : আপনি চাচ্ছেন যে আপনার কাছে যদি বিলিয়ন ডলার অর্থ থাকতো তাহলে আপনি আর কোন শিশুকে খাদ্যের অভাবে মৃত্যু হতে দিতেন না এবং এটা কতই না ভালো হতো! সকল শিশুর খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত হতো। তার মানে কি এই, যে আপনার বিলিয়ন ডলার অর্থ আছে?
২. আধুনিক সভ্য বিচারব্যবস্থা প্রতিশোধ বা শাস্তিমূলক নয়, বরং সংশোধনমূলক। সুতরাং শাস্তি বা প্রতিশোধমূলক বিচারব্যবস্থা কটতা যৌক্তিক তাও একটি প্রশ্ন।
৩. এবার দেখি মুমিনরা যে উপযুক্ত শাস্তি বা ন্যায়বিচারের দোহাই দিয়ে পরকালে বিশ্বাস করাতে চায়, কুরআন হাদিস অনুযায়ী কি আল্লাহ পরকালে ন্যায়বিচার বা উপযুক্তি শাস্তি নিশ্চিত করবেন, নাকি ক্ষমা করে দেন, একটু দেখি। এমনকি অবিচারও করেন। তাছাড়া, আমাদের দুনিয়ার বিচারব্যবস্থার তুলনায়ও কাল্পনিক আল্লাহর বিচারব্যবস্থা অসভ্য, অনুন্নত এবং পক্ষপাতমূলক। এ প্রসঙ্গে কিছু সহিহ হাদিস দেখি।
ক. শত খুন করেও তওবা করলে মাফ, (অর্থাৎ আপনি গণহত্যা করেও যদি তওবা করেন তবে ৭ খুন মাফ। এরচেয়ে কি দুনিয়ার বিচারব্যবস্থা ভালো নয়?
রেফারেন্স : https://www.hadithbd.com/hadith/link/?id=22324
https://www.hadithbd.com/hadith/link/?id=19078
খ. আপনি যতই অপরাধ করেন না কেন এটা আল্লাহর কাছে মুখ্য নয়। এমনকি সহিহ হাদিসে আছে যে মানুষ যদি অপরাধ না করতো তবে আল্লাহ মানুষকে ধ্বংস করে নতুন জাতি সৃষ্টি করতেন। কারণ আল্লাহ চান যে মানুষ অপরাধ করুক এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাক। আল্লাহ ক্ষমা করবেন এবং এটাতে আল্লাহ আনন্দ পান। আল্লাহতে ন্যূনতম বিশ্বাস থাকলেই তিনি আপনার সব গুনাহ মাফ করবেন, নবী আপনার পক্ষে ওকালতি করবেন, এমনকি আপনাকে জান্নাতে নেয়া ছাড়া নবী জান্নাতে যাবে না। বাহ্! কী সুন্দর বিচারব্যবস্থা।
রেফারেন্স : https://www.hadithbd.com/hadith/link/?id=56888
গ. যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শরিক করে না, সে যত গুনাহই করুক না কেন, সে জাহান্নামে যাবে না। এমনকি যিনা – ব্যভিচার বা চুরির মতো অপরাধ করলেও। ( ইসলামে যেহেতু যিনা-ব্যভিচার এবং চুরিকে অনেক বড় অপরাধ হিসেবে দেখা হয় তাই উদাহরণস্বরূপ এই দুইটা উল্লেখ করা হয়েছে)
রেফারেন্স : https://www.hadithbd.com/hadith/link/?id=3125
ঘ. কিয়ামতের ময়দানে মুসলিমরা যদি পাহাড় পরিমাণ গুনাহ নিয়েও হাজির হয়, তবে আল্লাহ তাদের সেই গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন এবং সেই গুনাহগুলো ইহুদি এবং খ্রিস্টানদের উপর চাপিয়ে দিবেন।
রেফারেন্স : https://www.hadithbd.com/hadith/link/?id=19081
ঙ. আমলের মাধ্যমে কেউ জান্নাত বা জাহান্নামে যেতে পারবে না। মানুষ জান্নাত বা জাহান্নামে যাবে আল্লাহর ইচ্ছায়।
রেফারেন্স : https://www.hadithbd.com/hadith/link/?id=19175
চ. আমরা জানি ১৯৭১ সালে আমাদের দেশের বহু হিন্দু নারীরা পাকিস্তানি মুসলিম সৈন্যদের দ্বারা ধর্ষিত হয়েছিলো অথবা কোন মুসলিম একটু হিন্দু নারীকে ধর্ষণ করলো। বলুনতো এটার বিচার কি হবে?
শস্যদানা পরিমাণ ইমান থাকার কারণে ওই মুসলিম ধর্ষকরা ক্ষমা পেয়ে জান্নাতে যাবে, অন্যদিকে ধর্ষিতা শিশু, কিশোরী বা নারীটি শুধুমাত্র অমুসলিম হওয়ার কারণে ধর্ষিতা হয়েও চিরজীবন জাহান্নামে জ্বলবে। বাহ্! কী সুন্দর বিচারব্যবস্থা। আমি সত্যিই মুগ্ধ হচ্ছি।
ছ. অমুসলিম ঘরে জন্ম নেয়া শিশুরা বিনা হিসেবে জাহান্নামী।
রেফারেন্স : https://www.hadithbd.com/hadith/link/?id=54670
https://www.hadithbd.com/hadith/link/?id=36748
অতএব কাল্পনিক ইসলাম এবং পরকালের বিচারব্যবস্থা শুধু মিথ্যাই নয়, অমানবিকও বটে। তাই আমাদের উচিত কাল্পনিক পরকালের আশা না করে দুনিয়াতেই আমাদের এমন একটি সমাজ ও বিচারব্যবস্থা গড়ে তোলা উচিৎ যেখানে মানুষ অপরাধপ্রবণ হবে না ; প্রতিশোধপরায়ণতা এবং প্রতিহিংসা থাকবে না এবং যারা অপরাধ করে তাদের সুবিচার নিশ্চিত হবে।