সমকামী নারীদের অদৃশ্য জীবন….!

বাংলাদেশের সমাজে পুরুষের যৌনতা প্রকাশ করার বিষয়টি যত সহজভাবে গ্রহণ করে, নারীদের ক্ষেত্রে সেই গ্রহণযোগ্যতা সমাজে নেই বলে নারীদের জন্য ট্যাবুটা আরো বেশি কাজ করে।

একটি যৌন অভিমুখীতা হিসাবে, সমকামিতা হল “একটি মানসিক, রোমান্টিক, এবং/অথবা যৌন আকর্ষণের একটি স্থায়ী প্যাটার্ন” যা শুধুমাত্র একই লিঙ্গ বা লিঙ্গের লোকেদের জন্য। এটি “আকর্ষণ, সম্পর্কিত আচরণ এবং সেই আকর্ষণগুলি ভাগ করে এমন অন্যদের সম্প্রদায়ের সদস্যতার উপর ভিত্তি করে একজন ব্যক্তির পরিচয়ের অনুভূতিকেও বোঝায়।”

বাংলাদেশে প্রচুর নারী আছেন যারা সমকামী, কিন্তু পরিবারের চাপে তারা বিয়ে করতে বাধ্য হচ্ছেন এবং পুরোটা সময়ই এক ধরণের আরোপিত জীবনযাপন করছেন।”

 বাংলাদেশের সমাজে পুরুষের জন্য যৌনতার বহিঃপ্রকাশটা অনেকটা ‘সহনীয়’ হলেও নারীর ক্ষেত্রে বিষয়টি সেরকম নয়।নিজের যৌনতা লুকিয়ে রাখতে রাখতে বা বাধ্য হয়ে আরোপিত জীবনযাপন করতে করতে এক সময় মানসিক সমস্যার সম্মুখীনও হওয়ার সম্ভাবনা থাকে,বাংলাদেশের আইনে সমকামিতা অবৈধ হওয়ায় এবং ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে এটি পাপ হিসেবে বিবেচিত হওয়ায় নিরাপত্তার স্বার্থে সমকামীদের একটা বড় অংশ এই বিষয়টি গোপন রাখেন। ফলে বাংলাদেশে সমকামীদের সম্পর্কে সঠিক তথ্য পাওয়া যায় না।

বাংলাদেশের জন্ম নেওয়া অরুনা প্রথম যখন বুঝতে পারেন যে তার পছন্দ আশেপাশের অধিকাংশ নারীর মত নয় – অর্থাৎ তিনি পুরুষদের চেয়ে নারীদের প্রতি বেশি যৌন আকর্ষণ বোধ করেন – তখন তিনি তা নিয়ে বিস্মিত বা আতঙ্কিত হননি।

নারী হয়ে একজন নারীকে ভালো লাগা, নারীর সাথে প্রেমের সম্পর্কে জড়ানো বা নারীকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পেতে চাওয়ার বাসনা অরুনার দৃষ্টিতে সবসময় খুব স্বাভাবিক একটি বিষয়ই ছিল।অরুনা বলছিলেন,পরিবারের সদস্যরা তার দৃষ্টিভঙ্গিকে সমর্থন করবে না, এমন আশঙ্কায় পরিবারের কাছে নিজে থেকে কখনো নিজের পছন্দের কথা প্রকাশ করেননি তিনি। কিন্তু সমস্যা শুরু হয় যখন বন্ধুদের কাছ থেকে পরিবারের সদস্যরা তার পছন্দের বিষয়ে জানতে পারেন,বন্ধু মহল বা পরিবারের কাছাকাছি বয়সের সদস্যরা, যারা একসময় বুঝতে পেরে সমর্থন করেছিল, তারাই একসময় আমার ভবিষ্যৎ, সংসার, সুখের কথা চিন্তা করে আগ বাড়িয়ে আমার ব্যাপারে পরিবারের কাছে প্রকাশ করে দেয়। এবং আশঙ্কা অনুযায়ী পরিবার আরো বেশি চড়াও হয়ে পড়ে।”

অরুনা বলছিলেন পরিবারের সদস্যরা জানার পর শুরুতে বোঝানোর চেষ্টা করেন যে তার পছন্দ সুস্থ নয়। এক পর্যায়ে তারা তার মানসিক অসুস্থতার চিকিৎসা করানোর চেষ্টা করেন এবং বিয়ের জন্য চাপ দিতে থাকেন।

“মজার বিষয় হলো, সেসময় যারা আমার অবস্থা বোঝেন বলে দাবি করেছিলেন, তারাও সমলিঙ্গের প্রতি আমার আকর্ষণের বিষয়টিকে সাময়িক মোহ বলেই ধরে নিয়েছিলেন। তারা সেই সম্পর্ককে কোনো দামই দিতে চাননি। অর্থাৎ আমি যতক্ষণ কোনো ছেলের সাথে না যাচ্ছি, ততক্ষণ এ ধরণের সম্পর্ক সাময়িক।”

বন্ধুবান্ধব ও কাছের মানুষের কাছ থেকে বিরূপ প্রতিক্রিয়া পাওয়ার পর একটা সময় নিজেকে গুটিয়ে নিতে শুরু করেন অরুনা।

“এর পরের ধাপে আমাকে এবং আমার সঙ্গীকে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করা হয়।

ইসলামে সমলিঙ্গীয় যৌনতা নিষিদ্ধ। কোরান ও হাদিসে পূর্ববর্তী সিমেটিক তথা ইব্রাহিমীয় ধর্মের মতোই কওমে লুতের সমকামিতা ও পুরুষমৈথুনের ইতিহাস বর্ণিত হয়ে আছে, যেখানে সমকামিতা ত্যাগ না-করার চুড়ান্ত পরিণতিতে শাস্তি হিসাবে ঐশী বিপর্যয়ের মাধ্যমে তাদের ধ্বংস হওয়ার কথা ঘোষণা হয়েছে। এমনকি হাদিসে পুরুষমৈথুনকারী বা পুরুষপায়ুকামী ও সমকামী ব্যক্তিদেরকে হত্যা করার নির্দেশও দিয়েছে। সমকামিতা হারাম এবং শাস্তিও কঠোর বলা হয়েছে। কী বলছেন আল্লাহ ? আল্লাহ বলছেন — ‘‘এবং লুতকেও পাঠিয়েছিলাম, সে তার সম্প্রদায়কে বলেছিল, ‘‘তোমরা এমন অশ্লীল কাজ করছ যা তোমাদের পূর্বে বিশ্বে কেউ করেনি। তোমরা তো কামতৃপ্তির জন্য নারীকে বাদ দিয়ে পুরুষের নিকট গমন করো, তোমরা তো সীমালঙ্ঘনকারী সম্প্রদায়।’’ (আরাফ : ৮০-৮১) রসুল সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন — ‘‘তোমরা কাউকে লুত সম্প্রদায়ের কাজ (সমকাম) করতে দেখলে যে করে এবং যার সঙ্গে করা হয় উভয়কে হত্যা কর।’’(তিরমিজি : ১২৭৬) রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন — ‘‘আল্লাহ তালা ওই ব্যক্তির প্রতি দৃষ্টি দেবেন না, যে-কোনো পুরুষের সঙ্গে সমাকামিতায় লিপ্ত হয় অথবা কোনো মহিলার পিছনের রাস্তা দিয়ে সহবাস করে।’’ (তিরমিজি, সহিহ আল জামে)। বোঝাই যাচ্ছে ১৪০০ বছর আগেও সমকামিতা বহাল তবিয়তে ছিল আরব দুনিয়ায়। এত কড়া দাওয়াইও থাকা সত্ত্বেও ইসলামীদের সমকামমুক্ত করতে পারেনি।

বিজ্ঞান সমকামকে ‘পাপকাজ’ বলে না। শরীর কেমন যৌনতা চাইবে কীভাবে চাইবে সেটা সেই শরীরের মালিকই বুঝবে। সমকামিতা কোনো ফ্যাশান নয়, সমকামিতা একটি ধারা – বিষমকামিতার পাশাপাশি সমকামিতা। যা কিছু গতানুগতিক তাহাই সত্য নয়, ধ্রুব নয়। যদি তাই-ই হয় তবে সমকাম ও সমকামিতাও ততটাই সত্য, যতটা সত্য বিষমকামিতা। উভকামিতা ও বিপরীতকামিতার সঙ্গে সমকামিতা বিপরীতকামী-সমকামী অনবচ্ছেদের অন্তর্গত যৌন অভিমুখিতার তিনটি প্রধান ভাগের অন্যতম বলে স্বীকৃত। ব্যক্তির মনে কেমন করে কোনো নির্দিষ্ট যৌন অভিমুখিতার সঞ্চার হয় সেই ব্যাপারে বিজ্ঞানীদের মধ্যে মতৈক্য নেই। অনেক বিজ্ঞানী মনে করেন জিনগত, হরমোনগত এবং পরিবেশগত কারণ একত্রে যৌন অভিমুখিতা নির্ধারণের জন্য দায়ী। জীববিদ্যা-নির্ভর কারণগুলিকে বেশি সমর্থন করা হয়।

  • Hafiz Shirazi

    Related Posts

    রুমডেট পর্ব -১

    প্রেম হওয়ার ৬ মাসের মাথায় প্রথমবারের মতো রুমডেটিংয়ে এসে আরিফ এবং ফারহানা পরস্পরকে খুব নিবিড়বন্ধনে জড়িয়ে শুয়ে আছে। বাইরে বৃষ্টি। মাঝেমধ্যে বজ্রপাতের শিহরণ। আরিফ তার খোলা বুক দিয়ে অনুভব করছে ফারহানার হৃদয়কম্পন। এমন সময় আরিফ ফারহানাকে জিজ্ঞেস করে : জান, তুমি কী দেখে আমাকে এত ভালোবাসলে? আমার মধ্যে কীএমন পেয়েছ? ফারহানা ফিসফিস করে উত্তর দেয় : ‘সোনাপাখী তোমার মধ্যে আমি যা পেয়েছি তা হলো—উত্তম চরিত্র। তুমি পাঁচওয়াক্ত নামাজ পড়ো।…

    Read more

    হজ্জ ও বিবিধ প্রসঙ্গ

    “মক্কা গিয়ে হজ্জ করিয়ে খরচ করলি যে টাকা সে টাকা গরীবকে দিলে গরীব আর থাকে কেডা,তর ঘরের ধন খা পরে পরে দেশের লোক না খাইয়া মরে সত্যি কথা কথা বললে পরে দেশে থাকতে দিবি না।”  মাতাল রাজ্জাক! প্রত্যেক ধনবান নারী পুরুষের জন্য একবার হজ্জে যাওয়া ফরজ। এখানে ধনবান শব্দটা দিয়ে এটাই নির্দেশ করে যে কিছু মানুষের সামর্থ্য থাকবে না, অর্থাৎ, দুনিয়া নামক পরীক্ষার হলে তিনিই বৈষম্যটা শুরু করেছেন। হজ্জ…

    Read more

    Leave a Reply

    Your email address will not be published. Required fields are marked *

    Latest

    আমাদের জাতীয় সঙ্গীত কি হিন্দু শাক্তদেবী মা-কালীকে উদ্দেশ্য করে লেখা?

    আমাদের জাতীয় সঙ্গীত কি হিন্দু শাক্তদেবী মা-কালীকে উদ্দেশ্য করে লেখা?

    একেই কি বলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা?

    একেই কি বলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা?

    কর্ণচিকিৎসা

    কর্ণচিকিৎসা

    তাকদীর বিষয়ক রেফারেন্স

    তাকদীর বিষয়ক রেফারেন্স
    কুদরত

    পরকাল নিয়ে মুমিনদের বহুল জিজ্ঞেসিত প্রশ্নের জবাব

    পরকাল নিয়ে মুমিনদের বহুল জিজ্ঞেসিত প্রশ্নের জবাব