“মক্কা গিয়ে হজ্জ করিয়ে খরচ করলি যে টাকা সে টাকা গরীবকে দিলে গরীব আর থাকে কেডা,তর ঘরের ধন খা পরে পরে দেশের লোক না খাইয়া মরে সত্যি কথা কথা বললে পরে দেশে থাকতে দিবি না।”
মাতাল রাজ্জাক!
প্রত্যেক ধনবান নারী পুরুষের জন্য একবার হজ্জে যাওয়া ফরজ। এখানে ধনবান শব্দটা দিয়ে এটাই নির্দেশ করে যে কিছু মানুষের সামর্থ্য থাকবে না, অর্থাৎ, দুনিয়া নামক পরীক্ষার হলে তিনিই বৈষম্যটা শুরু করেছেন। হজ্জ বিষয়টাকে ইসলামে অতি পবিত্র মনে করা হয়। মুসলমানদের মধ্যে একটা প্রবণতা দেখা যায় এমন যে, তুমি যতই পাপ কর তাতে কোন সমস্যা নেই। সে টাকা সুদের হোক আর ঘুষের হোক বা বেশ্যালয়ের হোক, সমস্যা নেই। একটা সময় হজ্জ করে এসে নামের আগে হাজ্বী লাগিয়ে দিবা সব শেষ, পূর্বে যত গুনাহ ছিল সব মাফ। বাহ্! কী সুন্দর বিচার।
আমরা প্রায় দেখি দূর্নীতিবাজ আমলা-মন্ত্রী এবং অসৎ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করে মক্কা গিয়ে সেলফি তুলে ছাড়ে। এক্ষেত্রে মোহাম্মদের প্রসংশা করতে হয়। এই মরুময় দেশের অর্থনৈতিক সুরক্ষা দিতে যে একটা দূরদর্শী ব্যবস্থা চালু করে দিয়ে গেছে। আরববাসী তার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে আজীবন। আর মাশাল্লাহ বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট এমন যে আশে পাশের লোক না খেয়ে মরুক, তাকে হজ্জ করতে ই হবে। আবার বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তদন্ত করলে বেরিয়ে আসবে গরীবের টাকা মেরে দিয়ে হজ্জ করতে যায়।
আমি একেবারে হজ্ব বিরোধী এমনটা নই। কেননা, হজ্বকে একপ্রকার ট্যুর হিসেবে নেয়াই যায়, কিন্তু বিপত্তি বাঁধে সেখানে মানুষের নিরাপত্তা নিয়ে। অযৌক্তিক ব্যবস্থাপনা, দলবেঁধে পৌত্তলিকদের মতো একটা চারকোনা ঘরকে কেন্দ্র করে ঘুরা, অতি গরম ইত্যাদি হজ্জের আনুষ্ঠানিকতার কারণে প্রচুর অপমৃত্যু হয়। যদিও, আমাদের দেশের মানুষের মাঝে ভুল একটি ধারণা আছে যে নবীর দেশে মারা গেলে বা জান্নাতুল বাকীতে কবর দিলে সে জান্নাতে যাবে। অথচ, কুরআন এবং সহিহ হাদিসে এধরনের কথা নেই। এগুলো হচ্ছে আমাদের দেশের মোল্লাদের বানানো জাল হাদিস যা মানুষের অপমৃত্যুকে কী সুন্দরভাবে জাস্টিফাই করে! প্রকৃতপক্ষে, মানুষকে হজ্বে নিতে পারলে মোল্লাদেরও লাভ। কারণ, তারা বিভিন্ন এজেন্সি থেকে কমিশন পায়।
তার চেয়ে বড় অবাক করা বিষয় হলো এই হজ্ব জিনিসটা পুরোটাই পৌত্তলিক মূর্তিপূজারীদের রীতি। এজন্য, আপনি আহলে কুরআন বা ইহুদী নাসারাদের মাঝেও এই রীতি দেখবেন না। যে মুসলিমরা সর্বদা মুখে পৌত্তলিকতার বিরোধিতা করে, তারাই এই হজ্বে গিয়ে পৌত্তলিক কর্মকাণ্ডগুলো সম্পাদন করে। জড় পাথরে চুমু দিয়ে নিষ্পাপ হওয়া ; শয়তানের প্রতিকৃতিতে পাথর মারা ; ইহরাম বাঁধা ; সাফা মারওয়া পাহাড়ে দৌড়াদৌড়ি করা; চারকোনা ঘরের দকে ফিরে প্রার্থনা এবং সিজদ করা ; নারী-পুরুষ পর্দাবিহীন ফ্রি মিক্সিং করা; যেখানে ইসলামে ফ্রি মিক্সিং হারাম এবং পর্দা ফরজ।
আচ্ছা, মুসলিমরা কেন কাবার চারপাশে চক্কর দেয়? পৌত্তলিকরাও এটা করতো, এমনকি আমাদের উপমহাদেশে হিন্দু ধর্মেও বিয়েতে সাত পাক দেয়ার বিষয়টা দেখা যায়। এটা যে স্পষ্ট পৌত্তলিকতা তাতে কোন সন্দেহ নেই। এবার দেখি, পৌত্তলিকরা কেন এটা করে। মুসলিম পণ্ডিত এবং কুরআন অনুবাদক ইউসুফ আলী তার কুরআনের তাফসীরে ” Ancient Forms of Pegan worship বা পৌত্তলিক উপাসনার প্রাচীন রূপ” এর একটি পরিশিষ্ট রয়েছে। তিনি লিখেছেন, এটি লক্ষ্য করা যায় যে সূর্য ও চন্দ্র এবং পাঁচটি গ্রহ পৌত্তলিকদের কাছে একেকটি জীবন্ত দেবতা, দেবতা বা দেবীর পরিচয়, যেগুলোর নিজস্ব বৈশিষ্ট্য রয়েছে। প্রাচীনরা তারা এবং নক্ষত্রপুঞ্জ সম্পর্কে জানত, কিন্তু তারা সাতটি স্বর্গীয় বস্তু সম্পর্কেও জানত যেগুলির নিজস্ব গতি আছে, সূর্য, চাঁদ, বুধ, শুক্র, মঙ্গল, বৃহস্পতি এবং শনি। যেহেতু তাদের টেলিস্কোপ ছিল না, তারা অন্যান্য গ্রহ সম্পর্কে জানত না। পৌত্তলিকদের মতে, এই ৭টি স্বর্গীয় বস্তুর প্রতিটিই পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে এবং তাদের প্রত্যেকটি একটি নির্দিষ্ট পৌত্তলিক দেবতার সাথে যুক্ত । কেন মক্কার পৌত্তলিকরা কাবাকে সাতবার প্রদক্ষিণ করেছিল? সম্মান করতে এবং উপাসনা করতপ সাতটি গ্রহের দেবতা যা তারা বিশ্বাস করত পৃথিবী প্রদক্ষিণ করছে।
তবুও এগুলোকে পৌত্তলিক প্রথা মনে হচ্ছে না? আচ্ছা, তাহলে এবিষয়ে ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা ওমরের একটা হাদিস দেখি, যেখানে ওমরসহ অনেক সাহাবীরা নিজেই অকপটে এটা স্বীকার করছে। নিচের ৩টি সহিহ হাদিস দেখি।
১. সহিহ মুসলিম – হাদিস ২৯৩৯ : খালফ ইবনু হিশাম, মুকাদ্দমী, আবূ কামিল ও কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) … আবদুল্লাহ ইবনু সারজিস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি টাক মাথাওয়ালা অর্থাৎ উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) কে কালো পাথর হাজারে আসওয়াদ চুমো দিতে দেখেছি এবং তিনি বলেছেন, আল্লাহর শপথ! আমি অবশ্যই তোমাকে চুন্বন করব এবং আমি অবশ্যই জানি যে, তুমি একটি পাথর, তুমি কারও ক্ষতিও করতে পার না এবং উপকারও করতে পার না। আমি যদি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে তোমায় চুম্বন করতে না দেখতাম তবে আমি তোমায় চুম্বন করতাম না।
হাদিসের মান : সহীহ
হাদিস লিংক : https://www.hadithbd.com/hadith/link/?id=12550
২. সহিহ বুখারী – হাদিস ১৪৪৫ : আহমদ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) … ‘আসিম (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) কে বললাম, আপনার কি সাফা ও মারওয়া সা’য়ী করতে অপছন্দ করতেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। কেননা তা ছিল জাহেলী যুগের নিদর্শন। অবশেষে মহান আল্লাহ অবতীর্ণ করেনঃ নিশ্চয়ই সাফা ও মারওয়া আল্লাহর নিদর্শন। কাজেই হাজ্জ (হজ্জ) বা ‘উমরাকারীদের জন্য এ দুইয়ের মধ্যে সা’য়ী করায় কোন দোষ নেই। (২ঃ১৫৮)
হাদিসের মান : সহীহ
হাদিস লিংক : https://www.hadithbd.com/hadith/link/?id=1552
৩. সহিহ বুখারীর – হাদিস ১৫৪১: হাদিসের অংশবিশেষ উল্লেখ করছি, সম্পূর্ণ হাদিস নিচের লিংকে পাবেন। “যারা ইসলাম গ্রহনের পূর্বে মুশাল্লাল নামক স্থানে স্থাপিত মানাত নামের মূর্তির পূজা করত, তাঁর নামেই তাঁরা ইহরাম বাঁধত। সে মূর্তির নামে যারা ইহরাম বাঁধত তাঁরা সাফা-মারওয়া সা’য়ী করাকে দোষ মনে করত। ইসলাম গ্রহণের পর তাঁরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! পূর্বে আমরা সাফা ও মারওয়া সা’য়ী করাকে দূষণীয় মনে করতাম যেহেতু এটা জাহেলি নিদর্শন(এখান কি করবো?)
সম্পূর্ণ হাদিস লিংক : https://www.hadithbd.com/hadith/link/?id=1548
অবশেষে বলতে চাই, প্রিয় মুসলিম ভাইরা, আরব পৌত্তলিকদের মতো বাপ-দাদার ধর্মে অন্ধবিশ্বাস না করে একটু নিরপেক্ষভাবে নিজেদের যুক্তি-বুদ্ধি খাটান এবং বোকা হওয়া থেকে বিরত থাকুন। ইসলাম যে নতুন বোতলে পুরাতন মদ এবং অন্যান্য ধর্মগুলোর মতই মানবরচিত ধর্ম তা দ্রুত উপলব্ধি করতে পারবেন ততই কল্যাণ।